কি ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে!!!

প্রভাব-১

গত ৫০ বছর ধরে ক্রমাগত ভাবে ফসিল ফুয়েল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানী ব্যবহারের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড আর গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।factorysmokeপ্রাক শিল্প যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিম্ন বায়ুমণ্ডলে ৩০% পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটেছে যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়েছে আর তার সাথে বাড়িয়েছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।অতি তাপমাত্রা জনিত কারণে মৃত্যু ছাড়াও আমরা আক্রান্ত হই নানা প্রকার সংক্রামক ব্যাধিতে।

প্রভাব-২

ক্রান্তীয় থেকে সুমেরু,প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকায় আবহাওয়ার প্রভাব এসেছে কখনো শান্তির বারতা হয়ে কখনো ধ্বংসের দামামা নিয়ে।dstr ১৯৯০ দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ৬০০০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বহু। শতকরা ৯৫ ভাগ দুর্যোগ এসেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

প্রভাব-৩

 তাপমাত্রার তীব্র আর স্বল্পমেয়াদী ওঠানামাও গুরুতরভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হাইপারথার্মিয়া অথবা অতিরিক্ত ঠান্ডায় হাইপোথারমিয়া দেখা দিতে পারে যা  হৃদপিণ্ড ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ বৃদ্ধি করে মৃত্যুর হার বাড়াতে পারে বহুগুণ।tempmap1 সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৩ ছিল ইউরোপের সবথেকে উষ্ণতম বছর এবং অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে ৭০০০০ বেশী লোকের মৃত্যু ঘটে সে বছর।

প্রভাব-৪

চরম বা অধিক তাপমাত্রায় বায়ুমণ্ডলে পরাগ এবং বায়ু তারিত অতিপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী বস্তুর আধিক্য বেশী দেখা যায় যা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রোগের উৎস হিসেবে কাজ করে।pollen বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এসব রোগে ভুগে।

প্রভাব-৫

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা যা বহু মাত্রায় ঘটায় উপকূলীয় বন্যা,   বাড়িয়ে দেয় জনসংখ্যা স্থানচ্যুতি।Climate-change--rising-se-001 পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাস করছে সমুদ্রের ৬০ কি,মি, তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে।অতিমাত্রায় বন্যার ফলে বাড়ছে মৃত্যু হার, সুপেয় পানি হচ্ছে অপ্রতুল আর জীবানুবাহিত রোগে ভুগে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন শিশু। অনেকক্ষেত্রে জনসংখ্যা স্থানচ্যুতির ফলে বাড়ছে সামাজিক কলহ এবং সামাজিক স্খলন।

প্রভাব-৬

দ্রুত পরিবর্তনশীল বৃষ্টিপাত বণ্টন আর অসময়ে খরার ফলে বিশ্বব্যাপী সুপেয় পানির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। প্রতি দশ জনে চারজন পানি ঘাটতির শিকার হোন। পানির অভাব এবং বিশুদ্ধ পানির সঠিক মাত্রায় ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারায় ডাইরিয়ার মতো মারাত্মক রোগে প্রতি বছর ২.২ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। এছাড়াও ট্রাকোমার মতো মারাত্মক সংক্রামক রোগে চোখ হারান অনেকে।

water

প্রভাব-৭

সঠিক মাত্রায় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় দুর-দুরান্ত থেকে পানি বহনকালে পানি দূষিত হবার সম্ভাবনা থাকছে, যার ফলে ঘটছে নানা প্রকার পানি বাহিত রোগ।

প্রভাব-৮

জলবায়ু সংবেদনশীল রোগ গুলোকে আ মুহূর্তে বলা হচ্ছে বৃহত্তম প্রাকৃতিক খুনী। পানি দূষণ এবং অন্যান্য জলবায়ু সম্পর্কিত এবং আবহাওয়া জনিত কারণে ম্যালেরিয়া, ডাইরিয়া, এবং প্রোটিন অপুষ্টি রোগে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছেন ৩ মিলিয়ন মানুষ যার এক তৃতীয়াংশই আফ্রিকায়। 7web_MEULABOH_wide.wide_photo.prod_affiliate.91

প্রভাব-৯

অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুতহারে কমছে খাদ্য উৎপাদন যা প্রকৃতপক্ষে এসব দেশগুলোতে তৈরি করছে দুর্ভিক্ষ আর শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে অপুষ্টি জনিত নানা রোগে। শুধু তাই নয়, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব শিশুর বেশিরভাগ আক্রান্ত হয় ম্যালেরিয়া, ডাইরিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগে।

এনভাইয়রনমেন্টমুভ.কম(environmentmove.com)

Check Also

প্রকৃতিতে সালফারের ঘাটতি; বিশেষজ্ঞ কী বলছেন? (শেষপর্ব)

দীর্ঘ গবেষণার ফলাফলস্বরূপ প্রাপ্ত উপাত্ত নিয়ে গবেষণাপত্রের সহলেখক লোয়েল জেনট্রি বলেন, “সাম্যবস্থা ঋণাত্মক। যে পরিমাণ সালফার ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন তা বায়ুমণ্ডল সরবরাহ করতে পারছে না। সেইসাথে ঘাটতি কৃষিজমিতেই। কৃষিজমিতে জৈব পদার্থে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে, কিন্তু তা অত্যন্ত ধীরে বিয়োজিত হয়। ফলে তা শস্যের চাহিদার সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা এবং এই পরিস্থিতিতেই কৃষকদের সালফার সার যোগ করার প্রয়োজন পড়বে”।

প্রকৃতিতে সালফারের ঘাটতি; বিশেষজ্ঞ কী বলছেন? পর্ব-১

সালফার চক্র এই মূহুর্তে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ, বর্তমান পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে সালফারের পরিমাণ প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। বিগত বিশ বছরের উপাত্ত নিয়ে ‘ইলিনয়িস বিশ্ববিদ্যালয়’র পরিচালিত সমীক্ষা এই তথ্যই দিচ্ছে। সমীক্ষা আরও বলছে, এর ফলে মধ্যপশ্চিমাঞ্চলের জলবিভাজিকা এবং নদীগুলোতে সালফারের পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে যার প্রভাব পড়তে চলেছে কৃষিজমিতে। এর ফলে কৃষকদের কৃষিভূমিতে পৃথকভাবে সালফার প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

2 comments

  1. খুব ভালো লাগলো লেখাটা। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

  2. স্যার আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করি আরও ভালো কিছু উপস্থাপন করবো আগামীতে ইনশাল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *