মরিচা ফুল

মোকারম হোসেন

প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো বিদেশি ফুল। কারণ, সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না। বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি বাগানে চোখে পড়ে। কিন্তু বইপত্র ঘেঁটে দেখি, এ ফুল আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। স্থানীয় নাম মরিচা, কাকটুরী ও বন কার্পাস। ফুলের মরিচা নামটি পাকা মরিচের রঙের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ইংরেজি নাম Blood Flower, Mexican Butterfly Weed ইত্যাদি। দেশের নদীতীরবর্তী অঞ্চল, পতিত স্থান ও পাহাড়ের পাদদেশে আপনাআপনি জন্মে। সম্প্রতি সিলেটের জৈন্তা পাহাড় লাগোয়া পরিত্যক্ত মাঠের ধারে ফুলটি দেখে নিশ্চিত হই যে এটি আমাদের বুনো ফুল। ফুলের ঝোপ ঘেঁষে একটি সরু জলের ধারা প্রবাহিত। স্থানীয়রা জানালেন, একসময় এখানে আরও অনেক ঝোপ ছিল। মানুষের অতিরিক্ত বিচরণের কারণে বর্তমানে সংখ্যায় অনেক কমেছে। 2013-05-21-19-39-52-519bcd88021be-untitled-29
মরিচা (Asclepias curassavica) চিরসবুজ খাড়া কাণ্ডের বহুবর্ষজীবী ছোট গুল্মের গাছ, সাধারণত এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গাছের গোড়া থেকেই প্রচুর ডালপালা গজায়। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্ত অনূর্ধ্ব দেড় সেন্টিমিটার লম্বা, পত্রফলক ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার, সুস্পষ্টভাবে বল্লমাকার, দুদিকে ক্রমান্বয়ে সরু, পাতলা ঝিল্লিময় ও মসৃণ। পাতা বিপ্রতীপ ও কাঁচা সবুজ রঙের। বিক্ষিপ্ত পুষ্পমঞ্জরিতে ৮ থেকে ১০টি করে ফুল থাকে। মঞ্জরিদণ্ড প্রায় সাত সেন্টিমিটার উঁচু। দলমণ্ডল উজ্জ্বল, গাঢ়-রক্তিম-লাল ও মসৃণ। পরাগধানী প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা। প্রস্ফুটনকাল প্রায় বর্ষব্যাপ্ত। ফল লম্বাটে, আগা চোখা, পরিপক্ব হলে আপনাআপনিই ফেটে যায়। ভেতরটা মসৃণ ও কোমল তুলায় পূর্ণ। পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণমণ্ডলীয় বাগানে প্রজাপতির খাবার কিংবা অলংকরণের জন্য এ ফুল রোপণ করা হয়।
মরিচা ফুল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পূর্ব এশিয়ার উষ্ণমণ্ডলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এবং পরিবেশানুগ। এ গাছের মূল পেটের পীড়া, বমনকারক ও জ্বরনাশক। পাতার রস কৃমিনাশক এবং রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। জ্যামাইকাতে এটি আমাশয়, অর্শরোগ ও গনোরিয়ায় ব্যবহূত হয়। বংশবৃদ্ধি কাণ্ডজ মূল ও বীজের সাহায্যে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এদের অনেক আবাদিত জাত বিভিন্ন উদ্যানের শোভাবর্ধনে সহায়তা করছে। আমাদের বাগানগুলোতেও আলংকারিক ফুল হিসেবে এটি আরও বেশি পরিমাণে রোপণ করা যেতে পারে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো (২২/০৫/২০১৩)

Check Also

শাশ্বতী ফুল গাঁদা

ভারত-বাংলাদেশে গাঁদা বা গেন্দা এমনভাবে দেশীয়করণ হয়েছে যে মনেই হয় না এই ফুলটা কোনো এক কালে সম্পূর্ণ বিদেশী ছিল। আমাদের দেশে বিয়ের বাসর, গাড়ি সাজানো, বিদায়, অভ্যর্থনা, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে গাঁদা যেন অপরিহার্য। বিদেশে সাধারণ ব্যবহার ছাড়াও গাঁদাফুল দিয়ে কফিন সাজানো হয়, গোরস্থানে রোপন করা হয় গাঁদা গাছ, যেমনটা দেখা যায় কাঠগোলাপের ক্ষেত্রেও, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপাইন বিভিন্ন দেশে।

ক্যাকটাস বন্দনা !

পুরো পৃথিবীতে ক্যাকটাসের প্রায় ১৪৮০ টি প্রজাতি ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ ক্যাকটাসের বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন কারণে ব্যবহার করে থাকে। এই অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে দিনের পর দিন ক্যাকটাসের বিভিন্ন প্রজাতির ওপর হুমকি বেড়েই চলেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে বেআইনিভাবে গাছ এবং এর বীজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করা, ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করা এবং অপরিকল্পিত ও অস্থিতিশীল চাষাবাদ ক্যাকটাসের বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা প্রজাতিগুলোর মধ্যে ৪৭ শতাংশের জন্য দায়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *