শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণিদের জীবনধারা(পর্ব-৪)

শাওন চৌধুরী

সাপ, শব্দটা শুনলেই অনেকের পিলে চমকে ওঠে, হঠাত করে মনের মধ্যে মরণভয় জেগে ওঠে। তারপরও প্রতিটা সাপের মধ্যেই যে বিস্ময়কর সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে একথা, কেওই অস্বীকার করতে পারবেন না। এদের কোন হাত-পা না থাকার কারণে এরা অনেক সমস্যাই অতি সহজে অতিক্রম করতে পারে যেগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত যেতে হয়। তারপরও আমার জানামতে এরাই মনেহয় একমাত্র প্রাণি যাদের নিয়ে পৃথিবীতে সবথেকে বেশি কুসংস্কার রয়েছে!

প্রায় একশত মিলিয়ন বছর পূর্বে এদের পূর্বপুরুষের পৃথিবীতে আগমন হলেও তখন তারা ছিল হাত-পা সমৃদ্ধ গিরগিটি স্বরূপ। ক্রমান্বয়ে সময়ের সাথে এদের দৈনন্দিন জীবনের সুবিধার্থে এদের হাত-পা ছোট হতে হতে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরাই একমাত্র প্রাণি যাদের চলনে সবথেকে বিস্ময়কর সব উপায়ের দেখা মেলে। কেও লাফিয়ে চলে, কেও গাছের সাথে শরীরকে পেঁচিয়ে ওপরে উঠে যায়, কেও পাতলা শরীরের দ্বারা এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে চলে আবার কেও ঘন্টার পর ঘন্টা পানির নীচে কাটিয়ে দেয়।flowerpot snake

Flowerpot Snake নামে একধরণের সাপ আছে যারা কিনা তাদের জীবনকালের সমস্ত অংশই মাটির নীচে কাটিয়ে দেয়, মাটির নীচে থাকার কারণে এদের চোখের প্রয়োজন হয় না এবং এই কারণেই এদের চোখ নেই। এরা সাধারণত মাটির নীচের বিভিন্ন পতংগের ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে সাপের পূর্বপুরুষ অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখেছিল! ঐ সময়ে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটেছিল ফলে এরা ধীরে ধীরে শিকারের পদ্ধতির মধ্যে পরিবর্তন আনে। এবং যেহেতু অন্যান্য প্রাণি থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণি অনেক বেশী পুষ্টিকর তার কারণে এরা সময়ের সাথে এদেরকে শিকার করা শুরু করে এবং এভাবেই বর্তমানে তারা সব থেকে দক্ষ শিকারি প্রাণিতে পরিণত হয়েছে।timber rattle snake

উত্তর আমেরিকাতে Timber Rattle Snake পাওয়া যায়, শিকার ধরার ক্ষেত্রে এদের ক্ষিপ্রতা গবেষকদের চোখ ধাধিয়ে দিয়েছে। সকালের রোদ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এরা শিকারের সন্ধানে বের হয়। এরা সাধারণত বিভিন্ন ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণি শিকার করে। যখন এদেরকে দেখে ঐ প্রাণিটি ঐ স্থান ত্যাগ করে তখন তারা যেই পথ দিয়ে যায় সেই পথে এক ধরণের গন্ধ থাকে এবং ঐ র‍্যাটলস্নেক ঐ গন্ধ অনুসরণ করে ঐ রাস্তাধরে শিকারের দিকে এগোয়। এরা ঐ সময়ে আক্রমণ করতে চেস্টা করেনা। কারণ স্তন্যপায়ীদের গতির কাছে সে হার মানতে বাধ্য। এরপর এরা ধীরে ধীরে ঐ পথ ধরে এগোতে থাকে এবং এদের ধারেকাছে যদি কোন উষ্মরক্তবিশিষ্ট প্রাণি থাকে তাহলে চোখের নীচে অবস্থির পিটের সাহায্যে এরা অতি সহজেই ঐ প্রাণিকে সনাক্ত করতে পারে। ঐ পথ ধরে এগোনোর সময়ে এরা অতি সন্তর্পণে এগোয় এবং এদের লেজের শেষপ্রান্তে অবস্থিত র‍্যাটলটিকে মাটির ওপরে রাখে যার কারণে কোন শব্দ সৃষ্টি হয়না। এরা একটা নির্দিষ্ট স্থানে যেয়ে অসীম ধৈর্যের সাথে ঐ প্রাণিটির অপেক্ষা করতে থাকে এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আসার আগপর্যন্ত এরা আক্রমণ করেনা। সীমার মধ্যে আসার সাথে সাথেই এরা অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে শিকারের শরীরে কামড় বসিয়ে দেয় এবং যার একমাত্র পরিণাম হচ্ছে মৃত্যু। এভাবেই এরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শিকার করে। সবথেকে মজার বিষয় হচ্ছে একটা ছোট ইঁদুর কিংবা কাঠবিড়ালি শিকার করেও এরা তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে।Tiger snake

অন্য অনেক প্রাণির মতোন এরাও এদের নাসারন্ধ্র দিয়ে বাইরের গন্ধ টের পেলেও বাইরের পরিবেশ বোঝার জন্য এরা এদের জিহ্বাকে ব্যবহার করে থাকে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়াতে Tiger Snake পাওয়া যায় যারা কিনা পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপ। এখানে প্রাপ্ত সদস্যদের বেশীরভাগেরই মাথার কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ এবং অনেক সদস্যই অন্ধ যদিও এদের শিকারে তা কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। এখানকার দ্বীপে Silver Gull পাওয়া যায়। আর এদের বাচ্চাই হচ্ছে এসব সাপের প্রিয় খাদ্য। ঐসব পাখির বাসার কাছে গেলেই সবগুলো পাখি একসাথে আক্রমণ করে ফলে বেশীরভাগ সময়েই এরা শিকারে ব্যর্থ হয়। র‍্যাটল স্নেকদের মতোন এদের তাপসংবেদী পিট না থাকলেও এরা জিহ্বার সাহায্যেই বুঝতে পারে যে এদের কোনদিকে যাওয়া উচিৎ!

বাইবেলে বর্ণিত স্বর্গীয় উদ্যানে সাপ সম্পর্কে নানান মন্তব্য করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা মানুষকে এড়িয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করে। কারণ শুধুশুধু বিষের অপব্যবহার করে কি লাভ! এজন্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিষাক্ত সাপগুলো উষ্মরক্তবিশিষ্ট প্রাণিদেরকে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। কেও কেও শব্দ করে এসব প্রাণিদেরকে সতর্ক করে আবার অনেকে এদের ফণা তুলে ঐসব প্রাণিদেরকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়! যদিও এমন অনেক সাপই রয়েছে যারা কিনা কামড় না দিয়েও অন্য উপায়ে শত্রুকে কাবু করে ফেলে।Mozambique Spitting Cobra

Mozambique Spitting Cobra এমনই একটা সাপ। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত এরা কাওকে আক্রমণ করেনা কিন্তু তার থেকে বেশী কাছে গেলেই এরা ঐ প্রাণির চোখ বরাবর বিষ ছুড়ে মারে আর এই বিষের একফোঁটাও যদি চোখে আঘাত করে তাহলে ক্ষণিকের মধ্যেই তীব্র বেদনার সৃষ্টি হবে এবং সে অন্ধ হয়ে যাবে। যদি এর পরেও আরো কাছে যাওয়া হয় তাহলে এদের কামড় অনিবার্য।king snake

আবার এমনো অনেক সাপ আছে যাদেরকে দেখে অনেক বিষাক্ত মনে হলেও এরা একফোঁটাও ক্ষতিকর নয়। এমন অনেক সাপ আছে যাদের শরীরের রঙ অনেক বিষাক্ত সাপের মতোন হলেও এরা বিষধর নয়, অন্যান্য শিকারি প্রাণিদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই এমন হয়। Coral Snake হচ্ছে খুবই বিষাক্ত সাপ যার এক কামড়ে মরণ নিশ্চিত আবার King Snake বিষাক্ত না হলেও প্রায় একই রকম গায়ের রঙ হয়, যার কারণে কোনটা বিষাক্ত আর কোনটা বিষহীন তা বোঝা একটু কঠিন। শরীরের কোন রঙের পরে কোন রঙ আছে সেইটা দেখেই বোঝা যায় যে কোনটা ক্ষতিকর আর কোনটা নয়! একটা কথা প্রচলিত আছে, Red and Black Venom Lack, Red and Yellow, can Kill a Fellow.hognose snake

আবার এমন কিছু সাপ রয়েছে যারা কিনা মরার মতোন পড়ে থাকে কিন্তু তারা জীবিত! হঠাত করে যে কেও দেখলেই মনে করবেন যে সাপটি মৃত। Hognose Snake এমনই একপ্রকার সাপ। কোন সাপ মারা গেলে যেমন কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে এরাও তেমনি কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে। এমনকি এরা পচা মাংসের মতোন গন্ধ নিঃসৃত করে যা দেখে যে কারোরই ভূল হওয়াটা স্বাভাবিক।

দক্ষিণ আমেরিকাতে এক ধরণের সাপ পাওয়া যারা কিনা বিভিন্ন পাখির ডিম খেতে গাছের মগডালে উঠে যায়। ঐসব পাখি এসব বুঝতে পারে যার কারণে কাছে যাবার সাথে সাথেই শক্ত ঠোঁট দিয়ে সাপের গায়ে ঠোকর মারতে থাকে। আর এই সাপগুলোও এমন ঠোকর খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে থাকে। যার কারণে এরা অতি সহজে হাল ছেড়ে দেয়না। এসব পাখির ডিমগুলো এদের মুখের তুলনায় অনেক বড় হবার পরেও এদের খাবার কারণ হচ্ছে, এদের চোয়াল যেসব লিগামেন্ট দ্বারা যুক্ত থাকে সেগুলোর স্থিতিস্থাপকতা অনেক বেশি। এসব ডিম মুখে নেয়ার পরে শরীরের মাংসপেশির সহায়তায় এরা আস্তে আস্তে ডিমকে শরীরের ভেতরে নিয়ে যায় এবং মেরুদন্ড সোজা রাখে। আর মেরুদন্ডের হাড়গুলো নীচের দিকে কোণাকুণি হয়ে থাকে ফলে চাপ দিলে ডিমের শক্ত আবরণ ভেদ করে পুষ্টিকর কুসুম বাইরে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে ডিমের আবরণটা একই উপায়ে মাংসপেশির সাহায্যে বাইরে বের করে ফেলে দেয়।african gigantic python

 

এগুলোতো অনেক কম খাবার, কিছু কিছু সাপ আছে যারা কিনা নিজের শরীরের থেকেও কয়েকগুণ বড় খাবার খায়। শিকারের সময়ে সাপের মতোন ধৈর্য মনেহয় আর কোন প্রাণির নেই। African Gigantic Python এমন এক ধরণের অজগর সাপ যারা কিনা সপ্তাহের পর সপ্তাহ শিকার ধরার আশায় এমনভাবে বসে থাকে যে হঠাত দেখলে মনে হবে যেন এদের নড়াচড়া করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে! শিকার কাছে আসার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত এরা এদের স্থান থেকে নড়ে না কিন্তু শিকার সীমার মধ্যে আসার সাথে সাথেই এরা আলোর গতিতে আক্রমণ করে ধরাশায়ী করে। শিকারকে এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরে যে আর দম নেবার ফুরসৎ মেলেনা যার কারণে কিছু সময়ের মধ্যেই মারা যায়। এরা সাধারণত বড় বড় স্তন্যপ্রায়ী প্রাণি শিকার করে যাদের শরীরের ব্যস তাদের মুখের তুলনায় কয়েক গুণ বড়! হয়তো অনেকেই ভাবছেন কিভাবে তারা এই খাবারকে গলাধঃকরণ করবে কারণ তাদেরতো হাত কিংবা পা কিছুই নেই! এদের ওপরের ও নীচের চোয়াল এক ধরণের লিগামেন্ট দ্বারা যুক্ত থাকে যা কিনা অনেক বেশী ইলাস্টিক ক্ষমতা সম্পন্ন, একারণে সহজেই এরা অনেক বড় শিকারকেও মুখে পুড়ে ফেলতে পারে। এখন কথা হচ্ছে, এরা এতো বড় খাবার হজম করবেই বা কি করে!! ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ খাবার গলাধঃকরণের পর এদের আর নড়ার শক্তি থাকেনা। এরা খোলা স্থানে সূর্যের আলোর নীচে পড়ে থাকে, তখন এদের পরিপাক হার প্রায় ৪০ গুণ বেড়ে যায়, যকৃত ২ গুণ এবং হৃৎপিণ্ড শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বেড়ে যায়। সূর্যের আলোর সহায়তায় এদের ঐ খাবার পরিপাক হতে প্রায় এক সপ্তাহ এবং মাঝে মাঝে আরো বেশী সময় লাগে। এই খাবার পরিপাকের পরে এদের মাসের পর মাস এমনকি সারা বছরে আর না খেয়ে থাকলেও চলে।
কিছু কিছু সাপ আবার বিভিন্ন ধরণের কাঁকড়া শিকার করে। সাধারণভাবেই কাঁকড়া শিকার করা অনেক দুরূহ ব্যপার কারণ এদের শরীর শক্ত খোলক দ্বারা আবৃত থাকে। সাধারণত রাত্রে এরা কাঁকড়ার খোঁজে বের হয়। এদের শিকার করার পদ্ধতি সত্যিই অদ্ভুত, যেহেতু কাঁকড়ার মূল শরীর শক্ত খোলকে আবৃত তাই এরা এদের হাত-পা দাঁত দিয়ে কামড়ে আলাদা করে নেয় এবং সেগুলো খায় আর এসব হাত-পা অনেক পুষ্টিকর।Queen snake
যুক্তরাস্ট্রের পূর্বাংশে নদীতে Crayfish পাওয়া যায়, কাঁকড়ার মতোন এদের শরীরও শক্ত খোলকে আবৃত থাকে আবার এদের শক্ত চিমটার মতোন শক্তিশালী হাত থাকে। এখানে Queen Snake পাওয়া যায় এবং এরা খাবার হিসেবে Crayfish ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেনা। এরা সব ধরণের ক্রেফিস শিকার করেনা। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ক্রেফিসের শক্ত খোলকের নীচে আরেকটি খোলকের সৃষ্টি হয় এবং তখন এরা এদের গায়ের শক্ত খোলক খুলে ফেলে। প্রথমদিকে এদের গায়ের আবরণ অনেক কোমল থাকে এবং এইসব সাপেরা ঐ সময়ের অপেক্ষাতেই থাকে, সব ধরণের ক্রেফিস তাদের শিকারের আওতায় পড়েনা। এই ক্রেফিস দেখতে অন্য সদস্যদের মতোন হলেও এরা এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কিনা কুইন্ স্নেক তার জিহ্বার সাহায্যে খুব সহজেই সনাক্ত করতে পারে। এরা এতোটাই নরম হয় যে সাপগুলো অনেক সহজেই এদের গলাধঃকরণ করতে পারে।king cobra

পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত সাপ হচ্ছে King Cobra. এদের এক কামড়েই মৃত্যু সুনিশ্চিত এবং এরা অন্যান্য অনেক সাপই শিকার করে। যখন এরা নিজেদের মধ্যে শক্তির লড়াইয়ে নামে তখন কখনো এরা একে অন্যকে কামড় দেয়না বরণ একজন আরেকজনের শরীর পেঁচিয়ে ধরে মাটিতে ফেলে, যতো সময় পর্যন্ত একজন হাল ছেড়ে না দেয় ততোক্ষণ পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকে। এভাবেই একে অন্যের ক্ষতি না করে এরা লড়াই চালিয়ে যায়।california_kingsnake

এমন অনেক সাপ আছে যারা কিনা গন্ধ পেয়েই বুঝতে পারে যে বিপরীত লিঙ্গের কোন সদস্য কাছেপিঠে মিলনে আগ্রহী আছে কিনা! Callifornian King Snake এমনই এক ধরণের সাপ। সাধারণত পুরুষ সদস্যরাই বুঝতে পারে। অন্যান্য অনেক সাপের মতোন এদের দৃষ্টিশক্তিও দুর্বল কিন্তু বাতাসের স্বাদ নিয়েই এরা বুঝতে পারে ঐ মিলনে আগ্রহী স্ত্রী সদস্য তার থেকে কতো দূরে! কাছে যাবার পরে একজন আরেকজনের নাক থেকে লেজ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে এবং কিছু সময় পরে এরা মিলিত হয়। এরা একসাথে জড়াজড়ি করে প্রায় কয়েক ঘন্টা পড়ে থাকে। কয়েক সপ্তাহ পরে স্ত্রী সদস্য ডিম পাড়ে এবং ডিম হতে বাচ্চা বের হতে প্রায় ৬-৭ সপ্তাহ সময় লাগে।
বিভিন্ন সাপ সাধারণত পাতার নীচে কিংবা নীরব কোন স্থানে ডিম পাড়ে এবং এসব ডিমের আবরণ সাধারণত খুবই নরম হয় যার কারণে বাচ্চাগুলোর বের হতে খুব কস্ট পেতে হয়না। অন্যান্য সরীসৃপ সদস্যদেরকে ডিমের খোলক ভেদ করে বের হতে মায়ের সাহায্য লাগলেও এদের ঐরকম সাহায্যের প্রয়োজন হয়না। মজার বিষয় হচ্ছে, কোবরার বাচ্চা ডিম থেকে বের হবার সাথে সাথে কামড় দিতে সক্ষম! এদের বিষদাঁত ছোট থাকলেও বিষের মাত্রা অনেক বেশী হবার কারণে যেকোন প্রাণিকেই মারতে সক্ষম।
অনেকেই হয়তো ভেবে বসতে পারেন সব সাপই ডিম পাড়ে। কিন্তু না, এমন কিছু কিছু সাপও প্রকৃতিতে বিদ্যমান যারা কিনা শরীরের ভেতরে ডিম রেখে দেয় এবং পরবর্তীতে বাচ্চা প্রসব করে। আর্জেন্টিনার উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন জলাভূমিতে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সাপ Anaconda বাস করে আর এরা এভাবেই সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। প্রথমে এরা জলাভূমির পাশে এসে রৌদ্রে নিজেকে গরম করে নেয় এবং শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে, বিকাল পর্যন্ত এরকম করে। বিকালের দিকে এরা আবার পানিতে নেমে যায়। এভাবে এরা শরীরের ভেতরে বড় হওয়া বাচ্চার জন্য সঠিক তাপমাত্রা (২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বজায় রাখতে পারে। বাচ্চা প্রসব করার আগে এরা পুলের চারপাশের পরিস্থিতি লক্ষ্য করবে এবং যদি কোন শিকারি প্রাণি থাকে তাহলে ঐসময়ে বাচ্চা প্রসব করবেনা। শান্ত পরিবেশ পেলেই তারা বাচ্চা প্রসব করবে এবং এরা একবারে সর্বাধিক ৪০টি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।

সাপই হচ্ছে একমাত্র প্রাণি যারা কিনা সব ধরণের পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে আর পরিবেশ অনুযায়ী এদের শরীরের বিভিন্ন অংশের পরিবর্ধন ঘটেছে। সামুদ্রিক সাপগুলো সাধারণত সহজে কামড় না দিলেও এদের বিষের মাত্রা সর্বাধিক। এরা সমুদ্রের মাঝখানেও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারে যদিও এদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য মিঠাপানির প্রয়োজন পড়ে আর এজন্য এরা বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে। এসব সামুদ্রিক সাপের খাবার হচ্ছে মূলত বিভিন্ন ধরণের মাছ। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে Beaked Sea Snake, এরা মাছ শিকার না করে কোরাল রিফ কিংবা সি অ্যানিমোনের মধ্যে লেগে থাকা বিভিন্ন মাছের ডিম খায়। এরা এতোটাই কম চলাফেরা করে যে এদের গায়ে মাঝেমাঝে বিভিন্ন শৈবাল জন্মাতে দেখা যায়।
হাত-পা না থাকার কারণে এদেরকে প্রতিবন্ধীদের মতোন দেখা গেলেও এরাই পৃথিবীর একমাত্র প্রাণি যারা কিনা পৃথিবীর সকল প্রকার পরিবেশে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। গর্তের ভেতরে, গাছের ওপরে, মিঠা পানিতে, সামুদ্রিক পানিতে এমন কোন জায়গা নেয় যেখানে এদের দেখা যাবেনা! এদের সৌন্দর্য, আভিজাত্য সবকিছুই যে কাওকে অতি সহজেই মুগ্ধ করতে বাধ্য।

লেখকঃ বিভাগীয় সম্পাদক (প্রাণিজগত) , বিজ্ঞান ম্যাগাজিন- জিরো টু ইনফিনিটি

Check Also

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র: নদী, নিরাপদ পানি ও মানুষের গল্প

দূষণের এই চিত্র শুধু পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের না, সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নদীরই। কোরোনাকালীন এই দূর্যোগে দূষণমুক্ত নদী হতে পারতো দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপদ পানির অন্যতম উৎস। আমরাই দূষণের মাধ্যমে মানুষকে অন্য উৎসের দিকে ঝুকতে বাধ্য করেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দলের চমৎকার আবিষ্কারঃ শৈবাল থেকে ন্যানো-ফিল্টার

লেনা আলফি সম্প্রতি শৈবাল থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ন্যানো ফিল্টার তৈরি করে সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *