বিশ্ব ধরিত্রী দিবসঃ ধরণীর কাছে কি আমাদের ঋণী হওয়া উচিৎ নয় ??

মাহবুব রেজওয়ান সানি 

আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। যে পৃথিবীতে আমাদের জন্ম, যে পৃথিবী আমাদের মায়ের মতো আগলে রেখেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী, সেই পৃথিবীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২২শে এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব ধরিত্রী দিবস বা Earth Day। ১৯৭০ সালের আজকের দিনে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ধরিত্রী দিবসের প্রচলন শুরু করেন। এরপর থেকে পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রতি বছর  এই দিনটিকে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯০ সালে জাতিসঙ্ঘ এই দিবসটিকে তাদের বার্ষিক পঞ্জিকায় স্থান দেয়।

বর্তমানে আধুনিক পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিশ্ববাসীকে পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্য নিয়ে পালন করা হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস । সেই সাথে পরিবেশ সৃষ্ট বিপর্যয় রোধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানানোও এই দিবসের উদ্দেশ্য। ১৯৭০ সালে যখন প্রথমবারের মতো দিবসটি পালন করা হয়, তখন এর নাম ছিল ‘এনভায়রনমেন্টাল টিচ-ইন’। আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো সিটিতে প্রথমবারের মতো ধরিত্রী দিবস পালিত হয়।world earth day

সমসাময়িক পরিবেশগত সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে কথা বলতে গেলে যে বিষয়টি মাথায় প্রথমে আসা উচিৎ, তা হচ্ছে ‘সবুজ নগরী’। গত কয়েকদিনের অসহ্য গরমে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠে গেছে । কিন্তু আমরা যদি আমাদের শহরকে আরও সবুজ করতে পারতাম, তাহলে বোধ করি এতোটা হ্যাপা পোহাতে হতো না আমাদের। সবুজ নগরীর প্রত্যাশা আমাদের সকলের। কিন্তু যান্ত্রিকতার মোহ আমাদের এতোটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে সেই সবুজ নগরীর প্রত্যাশা আমাদের কাছে আজ সুদূর স্বপ্ন!

আমাদের পরিবেশকে আরও সুন্দর ও শীতল করতে না পারার দায় আমাদের সকলের। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে আমরা আমাদের পরিবেশ নিয়ে আসলে কতোটা সচেতন? যে পৃথিবী আমাদের জন্য বাসযোগ্য ও মনোরম একটি পরিবেশ দিয়েছে, তাকে কি আমরাই কলুষিত করছি না? এবারের ধরিত্রী দিবসে গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা মূলত এই ব্যাপারগুলোকেই সামনে আনতে চেয়েছেন।

আমরা যে কোন সমস্যার জন্য মূলত সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের দায়ী করে থাকি। আপনাকে যদি এখন প্রশ্ন করা হয়, আপনি এখন পর্যন্ত কতোটি গাছ নিজ হাতে লাগিয়েছেন? হয়তো, আমাদের বেশিরভাগই কোন উত্তর দিতে পারব না। ব্যক্তিগতভাবেই যদি আমরা শুরু করতে পারি, তাহলে আমার আপনার সাথে আরও অনেককেই আমরা এই ভাল কাজের জন্য খুঁজে পাব। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি ওয়েনগেরি মাথাইের কথা, যিনি বৃক্ষরোপণে অবদানের কারণে আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। আমাদের দেশেও সামাজিক আন্দোলন বর্তমানে অনেক গতি পেয়েছে। আমি, আপনি গরমে অতিস্ট  হয়ে ঘরের এসি চালিয়ে বসে না থেকে যদি এই আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে পারব।

লেখকঃ জ্যেষ্ঠ সম্পাদক, এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

Check Also

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র: নদী, নিরাপদ পানি ও মানুষের গল্প

দূষণের এই চিত্র শুধু পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের না, সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নদীরই। কোরোনাকালীন এই দূর্যোগে দূষণমুক্ত নদী হতে পারতো দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপদ পানির অন্যতম উৎস। আমরাই দূষণের মাধ্যমে মানুষকে অন্য উৎসের দিকে ঝুকতে বাধ্য করেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দলের চমৎকার আবিষ্কারঃ শৈবাল থেকে ন্যানো-ফিল্টার

লেনা আলফি সম্প্রতি শৈবাল থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ন্যানো ফিল্টার তৈরি করে সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *