সমুদ্র নিয়ে যতো বিচিত্রতা !!!

সিফাত তাহজিবা 

সমুদ্র ! নামটি শুনলেই নিজের অজান্তেই মানুষ কল্পনাতে দূরদিগন্তে বিলীন হয়ে যাওয়া আকাশ আর সমুদ্রের নীল জলরাশির উন্মাতাল ঢেউয়ে হারিয়ে যান!

কে না ভালবাসে সমুদ্রকে? যে মানুষটি পানিকে ভয় পান, সাতার কাটবার জন্য পুকুরে নামতেই চাননা সেই মানুষটি সাগরের কাছে গিয়ে একটিবারের জন্য হলেই পানি স্পর্শ না করে থাকতেই পারে না !!

সমুদ্রে বাস করে দৈত্য দানব আর মৎস্যকন্যার কত গল্প আমরা ছোটবেলায় পড়েছি !এমনকি, টেলিভিশনে সমুদ্রের বুকে দুঃসাহসিক নাবিক সিন্দবাদের কার্যকলাপ দেখার জন্য অনেকেই অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম !

তবে, আমরা কয়জন জানি যে, সমুদ্রকে নিয়ে রয়েছে একটি বিশেষ দিন- এবং তা আজই- ৮ই জুন,‘World Oceans Day’ বা ‘বিশ্ব সমুদ্র দিবস’!!world oceans day logo

পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭১% জুড়ে প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক, আর্কটিক, এন্টার্টিক ও ভারত মহাসাগরের সামাজ্য।

২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছরের বিষয়বস্তু আর গেল বছরের বিষয়বস্তু একই তা হলো Together we have the power to protect the ocean!”

ঘন নীল রহস্যের চাদরে মোড়া সাগরের তলদেশ আর পানিতে বাস করে প্রায় ২৩০,০০০ রকম প্রজাতির সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য ! এছাড়া প্রতিদিন নিত্য নতুন প্রজাতিতো আসছেই!!!  একটু ডুব দিলেই নীল তিমি থেকে শুরু করে অক্টোপাস,হাংগর,ডলফিন,বিভিন্ন রংয়ের মাছ,উদ্ভিদ,আনুবীক্ষণিক জীব সবকিছুই আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে !এ যেনো শিল্পীর তুলিতে আকা অপরুপ সুন্দর এক টুকরো ক্যানভাস!!

অন্যদিকে,সমুদ্রবিদ্যায় অবদানের জন্য রয়েছে দু’টি পুরষ্কার-একটি হলো‘Alexander Agassiz Medal’,এটি ১৯১১ সালে স্যার জন মারে(Sir John Murray)তার বন্ধু বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার আগাসি’র সম্মানে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯১৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪৬ জন বিজ্ঞানী সনুদ্রবিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষনায় সাফল্য অর্জন করে এই পদক জিতে নেন।

আরেকটি পুরষ্কার হলো‘Sverdrup Gold Medal Award’,এই স্বর্ণপদকটি American Meteorological Society’র অধীনে শুধুমাত্র সাগর ও বায়ুমন্ডলীয় বিজ্ঞানের গবেষকদের জন্য বরাদ্দ।

৩৭ জন গবেষক ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত এ স্বর্ণপদক অর্জন করেন।

পাঠক, আসুন ঘুড়ে আসি কিছু ইতিহাস বিখ্যার সমুদ্র অভিযান থেকে!!

৪৮০ খ্রিস্টপূর্বে ‘Battle of Salamis’‘Battle of Thermopylae’যুদ্ধ হয় গ্রীক আর পারস্যের মধ্যে।

Battle_of_Thermopylae

এই কাহিনী নিয়েই ২০১৪ সালে আমেরিকানরা নির্মিত করেছে 300:Rise of an Empire অনেকেই হয়তো মুভিটি দেখে থাকবেন।

এরপর ১৮০৫ এ ফ্রেঞ্চ এবং স্পেনীয় শক্তিকে হারিয়ে দেয় ইংরেজরা, এটিও ঘটে আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে ! বিখ্যাত এই যুদ্ধের নাম,‘Battle of Trafalgar’

২৭৫০ খ্রিস্টপূর্বের কাছাকাছি সময়ে একজন মিশরীয় নাবিকের সাহায্যে যিনি ছিলেন ১১তম ফারাওয়ের একজন প্রশাসক‘Hannu’যাকে বলা হতো,প্রাচীন মিশরীয়রা ভূমধ্য সাগর আর লোহিত সাগর অন্বেষণ করে আরব উপদ্বীপ আর আফ্রিকার উপকূল আবিষ্কার করেন !এই সমুদ্র পথেই চলতো তাদের বাণিজ্য।

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়া নগরীর আলোকসংকেত হিসেবে পরিচিত প্রথম বাতিঘরটি বানানো হয় এটি দিয়ে সাগরে থাকা নাবিকদের সংকেত দেওয়া হতো !!

ইউরোপের সবচেয়ে সফল অভিযানটি হয় ১২ অক্টোবর ১৪৯২ সালে, ইতালিয়ান ক্রিস্টিফার কলম্বাস স্পেন রাজার জন্য সাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকা আবিষ্কার করলেন!!!

অবশ্য তার আগেই ১৪৮৭ সালে ভাস্কো দা গামা সমুদ্রপথ দিয়েই আবিষ্কার করেন ভারত বর্ষ!!

ইতিহাস বিখ্যাত বেশিরভাগ যুদ্ধই সংঘটিত হয় সমুদ্রপথে, এ জন্য শপ্তদশ শতাব্দীতে প্রণীত হয় ‘সমুদ্রপথ স্বাধীনতা’বা ‘Freedom of the seas’নামক আন্তর্জাতিক আইন!

অতীতে ডাচ এবং পর্তুগীজদের অবাধ চলাচল ছিল সাগরগুলোতে, তাদের অত্যাচারে সবসময়ই আতংকিত থাকত নাবিকরা!!

সমুদ্রকে নিয়ে আছে অনেক পৌরাণিক কাহিনীও। গ্রীক পুরাণমতে, বিশ্বের সাগরগুলো বিশেষত ভুমধ্য সাগর আর আটলান্টিকের অধিকারী হলেন দেবতা টাইটান, যাকে তারা ইউরেনাস আর দেবী গায়ার পুত্র মনে করে!!

টাইটানিক (TITANIC) জাহাজটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার? কেট উইন্সলেট আর লিউনার্ডো ডিক্যাপ্রিও’র অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় সবার হৃদয়ে জায়গা করে থাকা টাইটানিক মুভিটি একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে রচিত, টাইটানিক জাহাজটি ১৯১২ সালে ১৫ই এপ্রিল ২২০০ জন যাত্রী আর ক্রু নিয়ে উত্তর আটলান্টিকে ডুবে যায়!

শুধু টাইটানিক না, সমুদ্রের বুকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কাহিনী আর কল্পকথা নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত অনেক মুভি!

এর মধ্যে জনপ্রিয় কিছু মুভি হলো- Pirates of the Caribbean (পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারিবিয়ান), Finding Nemo(ফাইন্ডিং নেমো), Ship of Fools (শিপ অফ ফুলস), হাংগরে হিংস্রতা নিয়ে বানানো হয়েছে Deep Blue Sea (ডিপ ব্লু সী) আরJAWSএর মত মুভি!

সমুদ্রকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক সাহিত্য যেমন আর্নেস্ট হেমিংওয়েরThe Old Man And the Sea, হারম্যান মারভিলের Moby-dick,আছে রবার্ট লুই স্টিভেন্সনেরTreasure island!

oceans

সমুদ্রের গভীরে আছে বারমুডা ট্রায়াংগালের মত রহস্যও, যেখানে কোন জাহাজ গেলে আর ফিরতি পথে জাহাজটি আর দেখা যায় না, এমনও হয়েছে জাহাজটি দেখা গেলেও নাবিকদের খুজে পাওয়া যায়নি!! বিজ্ঞানীরা আজ অবধি এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি!!

এত বৈচিত্র্যর আধার সমুদ্রগুলোকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই্‌। ক্রমবর্ধমান দূষণের ফলে সমুদ্রের জীবকুলের অস্তিত্ত হুমকির মুখে।

অদূর ভবিষ্যৎ এ সমুদ্রগর্ভের আলোকচিত্রগুলোর রুপ-লাবণ্য আর হয়তো আগের মত থাকবে না !! বিশ্ব সমুদ্র দিবসে তাই আমাদের শপথ হোক, এই বিশাল নীল জলরাশি কে তাঁর মতো করে বাঁচতে দেয়ার শপথ, শপথ হোক, একটি সুস্থ জল-বাস্তুসংস্থানের শপথ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading