ঢাবি ক্যাম্পাসে ৭৮ প্রকার পাখি!!!

শাওন চৌধুরী

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় সবার কাছেই অনেক পছন্দের। ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার গাছপালা আর সাথে আছে বিভিন্ন প্রকার পাখি। কিছু সময় ক্যাম্পাস দিয়ে হাটলেই পাখির সরব উপস্থিতি যে কারোর নজর কাড়তে বাধ্য। আর যারা হলে থাকে তাদের ঘুমইতো ভাঙ্গে পাখির কল-কাকলির শব্দে। যদিও নগরায়নের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে এসব পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। যারপরণাই এরা প্রায় হারাতেই বসেছে তারপরও বলা যায় যে, ক্যাম্পাস জুড়ে বিচিত্র গাছগাছালির উপস্থিতি ও সবার সচেতনতাই এসব পাখির দেখা মেলার প্রধান কারণ।

পুরো ক্যাম্পাসে কী কী পাখির দেখা মেলে এটা অনেকেরই জানার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু সময়ের অভাবে অনেকের পক্ষেই জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আর গবেষণা বিষয়টা অনেক ধৈর্যের। যা কিনা নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা আর ল্যাবের চাপ থেকে বের হয়ে সময় বের করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা। তারপরও প্রতিদিন একটু একটু করে সময় বের করে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের নানান প্রান্তে ঘুরে পাখির একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকাটিতে কোন পাখির উপস্থিতি ক্যাম্পসে বেশি কিংবা কম তার ভিত্তিতেও একটি তালিকা তৈরী করা হয়েছে। যার ফলে যে কেও সহজেই বুঝতে পারবে যে কোন পাখিটি কম আর কোন পাখিটি বেশি পাওয়া যায়!

২০১২ এর জানুয়ারী থেকে শুরু করে ২০১৪ এর জুন পর্যন্ত, প্রায় ৩০ মাস ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ৭৮ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যপার হচ্ছে, এ সময়ে দুপ্রজাতির শকুন দেখা গেছে। একটি হচ্ছে বাংলা শকুন। আরেকটি হচ্ছে হিমালয়ী গৃধিনী। উপরিল্লিখিত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসের সব থেকে বেশি যে পাখিগুলো দেখা গেছে সেগুলো হচ্ছে, পাতিকাক, দাঁড়কাক,পাতি চড়ুই, ভাতশালিক, গো-শালিক, দোয়েল, বুলবুলি, তিলা ঘুঘু, আবাবিল এবং টিয়া। আর সবথেকে কম দেখা পাওয়া পাখিগুলো হচ্ছে, বাংলা শকুন, হিমালয়ের গৃধিনী, মেঘহও মাছরাঙা, মোহনচূড়া, ছোট পানকৌড়ি ও নীলকণ্ঠ। আরো উল্লেখ করার মতো পাখিগুলো হচ্ছে, কালো ফিঙে, হাঁড়িচাচা, খয়রালেজ কাঠশালিক, বাদামী কসাই, কালা গির্দি, দেশী নীল রবিন, সিপাহী বুলবুলি, নানান রকম ফুটকি, মৌটুসি, ধানী তুলিকা, ধলা ভ্রু-খঞ্জন ইত্যাদি।

খুব সকালে কিংবা বিকালের দিকে পাখির বৈচিত্র সবথেকে বেশি দেখা গেছে। পক্ষান্তরে দুপুরের দিকে পাখির আনাগোনা কিছুটা কম ছিল। শীতকালে ক্যাম্পাসের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ধরণের ফুল গাছ বিশেষ করে পলাশ ফুল গাছের দিকে তাকালে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যায়না। কারণ তখন প্রায় সারাদিনই ফুলের মধু খাওয়া অবস্থায় খয়রালেজ কাঠশালিক ও টিয়া পাখির দেখা মেলে।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ক্যাম্পাসে কিছু বাইরের মানুষের আনাগোনার কারণে কিছু কিছু স্থান নিয়মিতভাবে নোংড়া হচ্ছে। যার কারণে ঐসব স্থানে পাখি দেখা যায়না বললেই চলে। ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই এসব ব্যপারে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া হয়তো আর কয়েক বছর পরে পাখির এতোটা আনাগোনা আর দেখা যাবেনা!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাওন চৌধুরীর তোলা কিছু ছবি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল 

Black Rumped Flameback
Black Rumped Flameback- বাংলা কাঠঠোকরা

 

 

Pied Starling
Pied Starling- গো-শালিক

 

Rose Ringed Parakeet
Rose Ringed Parakeet- টিয়া পাখি

 

Spotted Owlet
Spotted Owlet- খুড়ুলে পেঁচা
White Throated Kingfisher
White Throated Kingfisher-সাদা গলা মাছরাঙ্গা
Brown Shrike
Brown Shrike- বাদামী কসাই
Chestnut Tailed Starling
chestnut tailed starling- খয়রালেজ কাঠশালিক

পাখির চেকলিস্ট এর উপর করা গবেষণাপত্র টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading