হলুদ পাখার সেই প্রজাপতির নাম খায়রিকাপাস !

সাব্বির হোসাইন খান

২০১৪-এর নভেম্বর মাসের ঘটনা। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সফরে বের হয়েছিলাম প্রিয় বড় ভাই বাবু গাজি’র সাথে। নভেম্বর ২ তারিখ রাত ১০ টা তে পূর্ব পরিকল্পনা মত হাজির হলাম বিমান বন্দর রেলস্টেশনে, গন্তব্য শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে নামার পর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে।  জাতীয় উদ্যানে পৌঁছানোর পর, সেখানকার মনোরম পরিবেশে বেশ কিছু রঙিন ডানার প্রজাপতির দেখা পেলাম। এর মধ্যে এক প্রজাতির কথা না বললেই নয়! তাদের ছবি তোলার  জন্য বারবার চেষ্টা করছি, কিন্তু মোক্ষম সময়ে তারা উড়ে যাচ্ছে। অবশেষে তুলে ফেললাম বেশ কিছু ভাল ছবি।

unnamedএতক্ষণ যার কথা বললাম সে আমার অতিপ্রিয় অনিন্দ্য সুন্দর এক প্রজাপতি; যার নাম খায়রিকাপাস। হ্যাঁ, এর ইংরেজি নাম Chocolate Albatross।অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন রচিত বাংলাদেশের প্রজাপতি নিয়ে লেখা বইয়ে এর বাংলা নাম হিসেবে খায়রিকাপাস নামটি ব্যবহার করা হয়েছে।খায়রিকাপাস, Pieridae পরিবারভুক্ত একটি প্রজাপতি। যার বৈজ্ঞানিক নাম Appiaslyncida, বর্ণিল এই প্রজাপতির ডানা ও দেহের ওপরের দিকটা হলুদ-সাদা আর পাখার শীর্ষ গাঁড় বাদামি। পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতি দেখতে প্রায় একই রকম। অন্যান্য প্রজাতির মত এই দিবাচর শ্রেণির প্রজাপতিগুলোরও পাখার রঙ থেকে শুরু করে প্রজননকাল, সংখ্যা, গায়ের রঙের মধ্যে অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। খায়রিকাপাসের পাখা আকারে ৫৫মি.মি. থেকে ৭০মি.মি.।


unnamed (1)খায়রিকাপাস আর্দ্র পাতা ঝরা, চিরসবুজ ও আধা-চিরসবুজ বনে সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়। তবে গৃহস্থ বাড়ির আশপাশে এবং বাগানেও দেখা মেলে।এদের জীবনচক্র (ডিম, শূককীট, পিউপা, প্রাপ্তবয়স্ক) এই চারটি ভাগে বিভক্ত। গাছের পাতার আগার ঠিক নিচের দিকে স্ত্রী প্রজাপতি ডিম পাড়ে। এদের ডিম সাধারণত হাল্কা কমলা বর্ণের। ডিমের ব্যাসার্ধ ১.২ থেকে ২ মিলিমিটার হয়। ডিম ৩ দিনে পরবর্তী দশা শূককীটে পরিণত হয়। শূককীট ১ম থেকে যথাক্রমে ৫ম ইস্টার পর্যায় শেষে অচল পিউপাতে পরিণত হয়। ইস্টার পর্যায়ের পুরো সময় এটি নির্দিষ্ট গাছের পাতা খেয়ে অতিক্রম করে। ১ম ইস্টার পর্যায় থেকে পিউপা পর্যায়ে পৌঁছুতে এদের ১৫ থেকে ১৭ দিন সময় লাগে। পরবর্তীতে ১১ থেকে ১২ দিনে এটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতিতে পরিণত হয় আর অপরূপ ভঙ্গিতে উড়ে বেড়ায় খোলা আকাশে।

এটি বাংলাদেশের একটি বিস্তৃত প্রজাতি, বাংলাদেশের প্রায় সব বনে এদের দেখা মিলেছে বলে তথ্য রয়েছে। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, এশিয়ার অনেক দেশ যেমন; ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশেও এদের দেখতে পাওয়া যায়।

লেখক,
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading