চলুন, ৫ মিনিটেই হয়ে যাই তুলসী বিশারদ !

নমিতা দাস

তুলসী আমাদের অতি পরিচিত একটি গাছ। বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্র এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। যারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী, তারা নিশ্চয়ই ছোট বেলায় দেবতার পূজার জন্য তুলসী পাতা ফুলের ঝুড়িতে  তুলেছেন! আসুন জেনে নেই এই গাছ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য…

বাংলা নাম : তুলসী

বৈজ্ঞানিক নাম : Ocimum sanctum.

ইংরেজি নাম : Sacred Basil , Holy Basil.

পরিবার : Lamiaceae
23
তুলসী একটি সুগন্ধি ও শাখাযুক্ত বিরুৎ উদ্ভিদ। সাধারণত ভেজা মাটিতে তুলসী গাছের জন্ম হয়ে থাকে। এটি আনুমানিক ৭৫-৯০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। তুলসীর পাতা ২-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতার কিনারায় আবার খাঁজকাটা নকশাও থাকে। শাখা প্রশাখার সামনের অংশ থেকে পাঁচটি ফুলের ডাল বের হয় এবং প্রতিটি ডালের চারিদিকে ছাতার মত করে ১০-১২ টি স্তরে ফুল ধরে। তুলসী ফুল আকারে বেশ ছোট, ফুলের রঙ হয় হালকা বেগুনী। সিলিন্ডার আকৃতির স্পাইকে ফুল গুলো ঘন ভাবে সজ্জিত থাকে। তুলসী ফল গুলোও আকারে ছোট, বীজ গুলো একটু হলুদ বা লালচে ধরণের। তুলসী গাছের পাতা, ফুল এবং ফলে এক ধরনের ঝাঁঝালো গন্ধ আছে, তা নিশ্চয়ই মোটামুটি সবারই জানা!

হিন্দু ধর্মে এই গাছটিকে বিশেষ ভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে । বৈদিক যুগ থেকে হিন্দুধর্মে এই গাছটির কথা বলা হয়েছে।  হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু পরিবার গুলোতে কৃষ্ণ ও রাধা নামে দু’ধরনের তুলসী গাছের পূজা করা হচ্ছে। শুধু যে ধর্মীয় ব্যাখ্যা রয়েছে এই গাছটিকে নিয়ে তা কিন্তু নয়! এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নামের মানে হচ্ছে “পবিত্র স্থান”। আসুন জেনে নিই এই গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা  কিছু ধর্মীয়, পরিবেশগত এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য !

হিন্দু ধর্মীয় তথ্য :

হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের বাড়ির উঠোনে আমরা তুলসী গাছ দেখতে পাই । তাঁরা তুলসী গাছের পূজো করে থাকেন। কারণ ব্রহ্মবৈরত পুরাণে তুলসীকে সীতা স্বরূপা,স্কন্ধ পুরাণে লক্ষ্মীস্বরূপা, চরক সংহিতায় বিষ্ণুর ন্যায় ভূমি, পরিবেশ এবং মানব জাতিকে রক্ষা করে বলে বিষ্ণুপ্রিয়া,ঋকবেদে কল্যাণী বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে, স্বয়ং ঈশ্বর তুলসী গাছকে “পবিত্র বৃন্দা” বলেছেন এবং এর সেবা করতে বলেছেন ।

পরিবেশগত তথ্য :

পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তুলসী গাছই এক মাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টাই অক্সিজেন সরবাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে। অথচ রাতের বেলা অন্যান্য উদ্ভিদ কার্বন -ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। তুলসী গাছ মাটি ক্ষয়রোধক। তুলসী গাছ বাড়িতে লাগালে তা কীট-পতঙ্গ, সাপ ইত্যাদি প্রাণির আগমন রোধ করে বাড়িকে আগলে রাখে।
24

বৈজ্ঞানিক তথ্য :

তুলসী গাছের ঔষধী গুন সম্পর্কে আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই অনেকখানি সমৃদ্ধ! তবুও আরেকবার ঝালাই করে নেয়া যাক সেই মোহৌষধি তুলসীর গুনের পসরা সম্পর্কে, এরই সাথে জেনে নেই এর পেছনে লুকিয়ে থাকা কিছু অজানা বৈজ্ঞানিক তথ্য! তুলসী গাছ কাশি, ডায়রিয়া রোগ, পোড়া দাগ তুলতে, জ্বর উপশমে ব্যবহার করা হয়। এতে ইউগেনল নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকায় তা Cox-2 inhibitor রূপে কাজ করে বলে তা ব্যথা নাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সাথে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এই তুলসী। এটি যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ঠাণ্ডা মৌসুমে শিশুদের তুলসী পাতার রস খাওয়ালে কৃমি দূর হয়। তুলসী পাতা বেঁটে মুখে মাখলে ব্রণ দূর হয়। সকাল বেলা খালি পেটে তুলসী পাতার রস খেলে খাবারের রুচি বাড়ে। তুলসী গাছে প্রায় ১০০’র মত ফাইটোক্যামিকেলস (যেমন -oleanolic acid, Beta caryophyllene  ইত্যাদি) থাকে বলে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। দাঁতের রোগ উপশম করে বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

এখন হয়তো তুলসী গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে, অন্তত একবারের জন্য হলেও মনে হবে, আপনি তুলসী বিশারদ! এটিই বা কম কিসের?

লেখক;
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading