ভ্রাম্যমাণ ইঞ্চি লতা !

জায়েদ ফরিদ

ছেলেবেলায় শুনেছিলাম, বারান্দায় ঝোলানো টবের এই সুশ্রী লতার নাম ইঞ্চি লতা। ভাবতাম এর পাতাগুলি যতোটুকু লম্বা ততোটুকুই বোধ হয় এক ইঞ্চির দীর্ঘতা। পরে যখন স্কুল থেকে ইঞ্চির সঠিক মাপটা জানতে পেরেছি তখন বুঝলাম এই গাছের পাতা আসলে দুই ইঞ্চির মতো লম্বা। বাগানের যত্রতত্র, বিশেষত কোণায় এই লতার উপস্থিতি বেশ দেখা যায়। শখ করে হঠাৎ কেউ কখনো সিলেট থেকে আনা গোলাকার মসৃণ পাথর দিয়ে তৈরি করেন ছোটখাটো শৌখিন রক গার্ডেন যেখানে পাথরের ওপরে বেশ শোভা পায় এই ইঞ্চি লতা, যা ল্যান্ডস্কেপের জন্যে একটি সুন্দর গ্রাউন্ড কভার।

ইঞ্চি লতা

মেক্সিকোর আদিবাসী এই গাছ সপ্তাহে এক ইঞ্চি করে বাড়ে বলেই হয়তো ‘ইঞ্চ প্ল্যান্ট’ নামটি এসেছে। দ্রুত বেড়ে গিয়ে আশেপাশে বিস্তৃত হয়ে পড়ে বলে এর আরেক নাম ‘ওয়ান্ডারিং জিউ’ বা ভ্রাম্যমান ইহুদী। পুরাণে আলোচিত, কোনো এক ইহুদী নাকি অভিশপ্ত হয়ে সারাজীবন হাঁটার শাস্তি পেয়েছিল। আর সেই অবিরাম চলন স্বভাব থেকেই এই নামের উৎপত্তি। এই স্বভাবের জন্যে এটা এক ধরণের আগাছা বা উইড হিশেবেও চিহ্নিত হয়েছে, অন্তত আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়াতে।

11889687_10205563817148714_5635045115367319674_n
কানছিঁড়ের নীল ফুল

এর পুরনো বৈজ্ঞানিক নাম জেব্রিনা পেন্ডুলা, কারণ পাতা দেখতে জেব্রা প্যাটার্নের। Tradescantia zebrina এর আধুনিক নাম। ‘কমেলিনাসিয়ি’ পরিবারের বেশ পরিচিত আরেকটি উদ্ভিদ হল Commelina benghalensis যাকে আমরা কানছিঁড়ে বলে জানি। এর পাতার রস কানে দিলে কানের ব্যথা এবং ক্ষত সেরে যায় খুব দ্রুত। নেপাল বা পাকিস্তানে এর শাকও খায় কিন্তু দুর্ভিক্ষ ছাড়া আমাদের উপমহাদেশে এটা কখনো খাওয়া হয়েছে বলে শুনিনি। মেক্সিকোতে লেবুর রসে এর পাতা জ্বাল দিয়ে একধরনের হেলথ্ টনিকও তৈরি করা হয়।

11898641_10205563801908333_8800320077451683780_n
কানছিঁড়ের শাদা ফুল

কানছিঁড়ে আর ইঞ্চি গাছ দুটোতেই ৩ পাপড়ির ফুল হয়, যদিও ৩ পাপড়ির ফুল সহজে আমাদের চোখে পড়ে না। ইঞ্চির ফুল লাল আর কানছিড়ের ফুল নীল। তবে Tradescantia fluminensis নামের এক প্রজাতির ফুল শাদা রঙেরও হয়। কানছিঁড়ের পাতা লম্বাটে আর পাতায় হুল থাকে কিন্তু ইঞ্চি লতার পাতা কিছুটা মাংশল বা সরস এবং তাতে আদৌ হুল থাকে না।

11891140_10205563812068587_7990865965507100329_n
বোট লিলি, মোজেস ক্র্যাডল

এই পরিবারের অন্তর্গত আরেকটি উদ্ভিদের নাম Tradescantia spathacea বা ‘মোজেস ক্রাডল্’ যা আমাদের দেশের বাগানে এবং ঝুল বারান্দার টবে দেখা যায়। এর আরেক নাম বোট লিলি কারণ এর শাদা ফুলের মঞ্জরীপত্র দেখতে নৌকার মতো। পত্রকুক্ষিতে জন্মানো এই মঞ্জরীপত্রের ডিঙ্গিনৌকা সদৃশ আকারের জন্যেই এটা মোজেস ক্র্যাডল্। বিষাক্ত হলেও অতীতে এক সময় এর মেরুন রঙের রস গালের প্রসাধনে ব্যবহার করা হয়েছে।

ইঞ্চি গাছ ঝুলানো টবে রাখা মন্দ নয়, এতে এর পাতার নিচের দিকের সুন্দর মেরুন রঙ দৃষ্টিগোচর হয়, তবে অতিরিক্ত বেড়ে যায় বলে ট্রিমিং করে রাখতে হয়। এর ডাঁটা ছেঁটে কেটে বাগানের কোণায় যেনতেনভাবে ফেলে রাখলেও ‘সিঙ্গাপোর ডেইজি’-র মতো গাছ গজাতে পারে। বীজ ব্যতিরেকে মাত্র এক ইঞ্চি কাণ্ড থেকেও এর বিস্তার ঘটতে পারে। এর কান্ড এবং পাতার স্বচ্ছ কষ বেশ এলার্জিক, তাই গ্লাভস্ ছাড়া নাড়াচাড়া করলে হাত ধুয়ে ফেলা ভাল।

লেখক;
স্থপতি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading