মৃত্তিকা; সর্বক্ষেত্রে, সগৌরবে !

মনিজা মনজুর

প্রিয় পাঠক, একটা কথা কী বিশ্বাস করেন? আমাদের চারপাশে পরিবেশের যা কিছু সুন্দর, তার সবই আপনার পদতলে। যেখানেই থাকুন না কেন আপনার ডানে-বাঁয়ে এমনকি সাগরের তলদেশে চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো সৌন্দর্যের উৎস আপনি হরহামেশাই পায়ের নিচে মাড়িয়ে যান। কখনও এভাবে ভেবে দেখেছেন কী?

চলছে আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ। সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিপাদ্য বিষয়- প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় মাটি। জল, স্থল, বায়ু সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। জল কিংবা স্থল যেখানকার বাসিন্দাই হই না কেন মাটি আমাদের পিছু ছাড়ে না। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয়ভাবেই মাটি আমাদের রক্ষা করে যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে।

world-soil-day

সুস্থ মাটি সুস্থ উদ্ভিদের জন্ম দেয়। ক্ষুদ্রতম গাছ ড্রাফ উইলো থেকে শুরু করে দানবাকৃতির রেডউড পর্যন্ত সব উদ্ভিদই মাটি থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান নিয়েই বেড়ে উঠে। পরিবেশ এবং ভূ-প্রকৃতিগত দিক দিয়ে এক এক দেশের মাটি এক এক রকম।  প্রথমেই আসি বন- জঙ্গলের কথায়। সবুজের সমারোহ দেখে আমাদের যে মুগ্ধতা তা কিন্তু মৃত্তিকারই অবদান। অন্যদিকে দাবানলে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বনে আবারো প্রানের সঞ্চার হয় একমাত্র মৃত্তিকার কারনেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে বিগত ৩০ বছর ধরে নির্বিচারে বনায়ন ধ্বংস চলছেই। মৃত্তিকা যেখানে আমাদের জীবন ধারণে তার সকল উপকরণ নিয়ে প্রস্তুত, সেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের সাময়িক আয়েশের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের অস্তিত্বকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি।

shutterstock_12730534

এরপরই বলা যায় তৃণভূমির কথা। তৃণভূমির মাটি প্রচুর পরিমানে হিউমাস সমৃদ্ধ। এসব অঞ্চলে শীতকালে উদ্ভিদ মরে গেলে এর পচে যাওয়া অবশিষ্ট অংশ তুষারপাতের সময় মাটির আবরণ হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তীতে মাটির সাথে মিশে মাটিকে উর্বর করে ও প্রাকৃতিকভাবেই জৈব পদার্থ তৈরি হয়। যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে শষ্য উৎপন্ন হয়। আমাদের দেশে তৃণচারণভূমি খুব একটা নেই তবে যুক্তরাষ্ট্রে এমনটা অনেক দেখা যায়।

SONY DSC

তৃণচারণভূমি না থাকলেও জলাভূমি বাংলাদেশের মৃত্তিকার এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমতল-নিচু জায়গায় অথবা অপেক্ষাকৃত নিচু স্থানে যেখানে বৃষ্টির পানি জমতে পারে সেখানে জলাভূমির সৃষ্টি হয়। সাথে আছে মাছ, ব্যাঙ থেকে শুরু করে অসাধারন জীববৈচিত্র্যের সমাহার। জলাভূমির মাটি পানি ধরে রাখতে অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে। তাই নদী বা জলপ্রবাহে বন্যার সময় অতিরিক্ত পানি উপচে আসতে পারে না। আমাদের দেশের রাতারগুল, বিছনাকান্দি, টাংগুয়ার হাওড় জলাভূমির এক অনন্য উদাহরণ।

download

থইথই জলাভূমির পর এবার আসি খটখটে মরুভূমির কথায়। যেখানে বৃষ্টিপাতের অপ্রতুলতার কারনে খুব কম উদ্ভিদ জন্মায়। ওদিকে সূর্যের তীব্রতায় পানিও শুকিয়ে গেলে অপ্রতুল হয়ে পড়ে মাটিতে বিদ্যমান প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান, ফলে উদ্ভিদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, মৃত্তিকা অসংখ্য অনুজীবের আবাসস্থল। মরুভূমির উচ্চ তাপমাত্রায় এরা বেঁচে থাকতে সক্ষম। অ্যাকটিনোমাইসিটিস (মরুভূমিতে বসবাসরত অনুজীবগুলোর প্রায় ৫০% ই এই প্রজাতির), মিউকর, পেনিসিলিন, নস্টক, অ্যাসপারগিলাস সহ বিভিন্ন অণুজীব উদ্ভিদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।

1280px-Death_Valley,19820816,Desert,incoming_near_Shoshones

প্রকৃতির কথা তো হল। শহর অঞ্চলই বা বাদ যাবে কেন? আছে পাঠক, শহর থেকে মাটি মোটেও অবিচ্ছেদ্য নয়। আমরা জানি, মাটি পানি পরিশোধন করে। আমরা যে ধরণের পানিই পান করি না কেন তা বিকল্প পদ্ধতিতে পরিশোধিত হয়ে আমাদের ঘর-বাড়িতে সরবরাহের আগেই মাটিতে পরিশোধিত হয়।

সুতরাং বলা যায়, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন মাটিই আমাদের ধারণ করে, রক্ষা করে, পরম মমতায় আগলে রাখে। আমরা ক’জনই বা এ নিয়ে ভাবি? অমূল্য এই রত্নকে ক্ষয়ের হাত রেখে রক্ষা করার এখনই সময়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading