প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র; প্রজাপতির রাজ্যে নতুন সংযোজন

লিসান আসিব খান

রাতের আঁধারে যেমন জোনাকির রাজত্ব, দিনের আলোতে তেমন প্রজাপতির রাজত্ব। প্রকৃতির মাঝে নানা প্রজাতির ফুলে প্রজাপতি যখন মনমাতানো রঙের মেলা বসায় তখন সত্যিই প্রকৃতির মাঝে যেন এক নতুন গতির সঞ্চার ঘটে।

‘ডঃ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান কারখানা’র পাশে নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিণ্ডিকেট কর্তৃক বরাদ্দকৃত ৩ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে বাংলাদেশের অন্যতম ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র’ ।গত বছর ৫ ডিসেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্রের ” ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন । তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র’-এর মূল অবকাঠামো তৈরির কাজ ।

প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র তৈরিতে যিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি হলেন  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মনোয়ার হোসেন। ১৯৯৬ সালে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রজাপতি নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করেন তিনি ।

2
ছবি : সাব্বির হোসাইন খান

গবেষক ড. মোঃ. মনোয়ার হোসেন বলেন , বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে প্রজাপতির এই ‘কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র’। কৃত্রিমভাবে প্রজনন ঘটিয়ে শতকরা ৩৬ ভাগ ডিম বাচ্চায় পরিণত করা সম্ভব হয়। প্রাকৃতিক ও  কৃত্রিম উপায়ে বংশবৃদ্ধি এবং পূর্ণতা প্রাপ্তির পর নতুন প্রজাপতির প্রজনন করা হবে এখানে। কিছুদিন পরিচর্যার পর বাগানে ছেড়ে দেয়া হবে নতুন নতুন প্রজাতির প্রজাপতি। এখানে কৃত্রিম উপায়ে প্রজাপতির খাবার ও অন্যান্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রজাতি সংরক্ষণ করা সহজ হবে। এছাড়াও প্রজাপতির সংরক্ষণ, প্রজনন ও গবেষণাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে ‘বাটারফ্লাই ব্রিডিং সেন্টার অ্যান্ড পার্ক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন। এতে থাকবে প্রজাপতির ব্রিডিং নেট হাউজ, প্রজাপতির মিউজিয়াম ও রিসার্চ সেন্টার। আরও থাকবে চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক।

প্রকৃতির সবচেয়ে সংবেদনশীল প্রাণের একটি হলো প্রজাপতি। দেশের একমাত্র এই প্রজাপতি পার্কেই থাকবে, ‘কমন ক্রো’, ‘প্লাম জুডি’, ‘ডিঙ্গি বুশব্রাউন’, ‘কমন ডাফার’, ‘এপফ্লাই’, ‘মটিলড ইমিগ্রান্ট’, ‘মানকি পাজল’, ‘পেইন্টেড লেডি’ এমন নানা জাতের প্রজাপতি। এছাড়া থাকবে ট্রপিক্যাল গার্ডেন, প্রজাপতি জোন, প্রজাপতি জাদুঘর  প্রজাপতি রিয়ারিংরুম, কৃত্রিম লেক-ঝর্ণা, ফিশফিডিং জোন ও প্রজাপতি ফিডিং জোন।

প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র তৈরিতে ড. মনোয়ার হোসেনের সাথে কাজ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ১৭ জন শিক্ষার্থী। তরুন প্রজাপতি গবেষক সাব্বির হোসেন খান বলেন ,পরিবেশ সুস্থ রাখার জন্য বনের ১০০ শতাংশ ভূমিতে ১০টি করে প্রজাপতি আবশ্যক ,যা আমাদের নেই। ‘প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র’-এর মাধ্যমে এটি অনেকাংশে পূর্ণ হবে ।

unnamed (10)
ছবি : সাব্বির হোসাইন খান

প্রজাপতি জীবনচক্র সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট হোস্টপ্লান্টের, যেখানে প্রজাপতি  ডিম পাড়ে । আমাদের দেশের অনেকের প্রজাপতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেও নেই প্রজাপতির হোস্টপ্লান্ট সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা। প্রজাপতির প্রতিটি হোস্টপ্লান্ট সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে এই পার্কটির মাধ্যমে।

রঙিন পাখা মেলে লতায়-পাতায় ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট প্রাণীটির প্রতি আছে সবার এক অজানা আকর্ষণ । অবাক হয়ে সবাই দেখে তার পাখার রঙের বাহার। ‘কুমারী লতা’, ‘ঝুমকো লতা’ ও ‘আঙ্গুর লতা’র মতো গুল্ম প্রজাতির নানা ধরণের গাছ লাগানো হচ্ছে এই পার্কটিতে । শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ কাজ।আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রজাপতি মেলায় খুলে দেওয়া যাবে এই পার্কটি, এমনটি আশা করছেন প্রজাপতি গবেষক ড. মোঃ. মনোয়ার হোসেন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading