চিনে নিন মৃত্তিকার জাতঃ পর্ব- ১

প্রকৃতি ভালোবাসেন আপনি, একটু ছুটি আর সুযোগ পেলেই ছুটে যান সবুজের কাছে, পাহাড়ের কাছে, সমুদ্রের কাছে। ধরুন আপনি বরেন্দ্র অঞ্চলে চষে বেড়াচ্ছেন অথবা সিলেট কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীনে হারিয়েছেন। আপনার দু’চোখ ভরে দেখছেন লাল মাটি- খয়েরি মাটি- বাদামি মাটি কিংবা ধূসর মাটির বুক চিঁড়ে সবুজ প্রাণ জেগে উঠেছে আকাশ অব্দি। কি? ভাববেন না একবার এই মাটির কথা? প্রশ্ন জাগবেনা কেমন করে হলো এতো বিস্তর ফারাক!

তবে তো আর এমনি এমনি বসে থাকা যায় না। মাটির হাল হকিকত তো কিছু জানতেই হবে!  দুনিয়া জুড়ে যে হাজার শ্রেণীর মাটি রয়েছে তাঁদের মূল জাত বা বর্গ সম্পর্কে তো একটু জানা চাই নাকি?

বিশ্বজুড়ে মাটি বা মৃত্তিকার যে ১২ টি প্রধান জাত বা বর্গ রয়েছে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনার ধারাবাহিক আয়োজন। চলুন তবে শুরু করা যাক……

আলফিসল (ALFISOLS)

এই মাটি এমন এক প্রাকৃতিক ক্ষয় প্রক্রিয়াতে তৈরি হয় যাতে ক্লে মিনারেল বা কাদামাটি এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানসমূহ মাটির উপরিভাগ অর্থাৎ যেটি আমরা দেখতে পাই; সেটি থেকে সাব-সয়েল বা অন্তঃমৃত্তিকায় যেয়ে জমা হয়। অন্তমৃত্তিকা বলতে বোঝায় মাটির উপরিভাগ থেকে কয়েক সেন্টিমিটার (১৫ থেকে ২০ সেঃমিঃ) নিচের অঞ্চলকে যেখানে মূলত গাছের মূল পৌঁছে থাকে এবং অবলম্বন পায় এবং সেখানে আর্দ্রতার যোগানসহ উদ্ভিদকে পুষ্টি ঊপাদান দিয়ে থাকে। বন বা যেখানে অনেক গাছপালা থাকে এবং প্রচুর শস্য উৎপন্ন হয়, এই মাটি সেখানে বেশি দেখা যায়। পৃথিবীর বরফহীন জমির ১০ ভাগ এই বর্গের অন্তর্ভূক্ত।

Alfisols
                                            বিশ্বজুড়ে আলফিসল এর অবস্থান

এই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান গভীরতার সাথে কমে ঠিকই, তবে মাটির উপরিভাগ থেকে ১.২৫ মিটার পর্যন্ত জৈব পদার্থের পরিমান ০.২% এর বেশিই থাকে।  উত্তর আমেরিকার পূর্ব দিকের যে সকল অংশে গম চাষ হয়, সেখানে আলফিসল এর দেখা মেলে।

আলফিসল বর্গের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকা
                                  আলফিসল বর্গের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকা

ভূমিধ্বস বা বিভিন্ন কারণে মাটি ক্ষয় হলে আলফিসল এর ভবিষ্যৎ উৎপাদনশীলতার উপর প্রভাব পড়ে। অ্যালুমিনিয়ামের উপস্থিতিতে বিষক্রিয়া খুব একটা প্রভাব ফেলে না এই মাটিতে, তবে পটাসিয়াম এবং অ্যামোনিয়া এই মাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলেছি, প্রচুর শস্য উৎপন্ন হয় এই মাটিতে, তাই উর্বরতার দিক থেকেও এই মাটি অনন্য! তবে বাংলাদেশে মৃত্তিকার এই বর্গটি অনুপস্থিত।

মোঃনাঈম হাসান মুন্না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading