মৌসুমি ফলে বিষ দিয়ে নীরব গণহত্যা বন্ধের দাবি

শুরু হয়েছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। বাজারে আসতে শুরু করেছে মধুমাসের আম, জাম, লিচু, আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক সব ফল। মধুমাসের নিরাপদ মৌসুমী ফলের প্রাপ্তি নিয়ে জনমনে শংকা কাটছে না। কারণ বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি মৌসুমী ফলের উৎপাদন এবং বিপননে ব্যাপক ভাবে বিষের ব্যবহার করা হয়। মৌসুমী ফলে বিষের ব্যবহারে জীবন ও প্রকৃতি বিপন্ন হবার আশংকা থাকে। গত ১৯ মে ২০১৭, শুক্রবার, সকাল ১০:৩০ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, অরুণোদয়ের তরুণ দল, স্বচেতন নগরবাসী, সুবন্ধন সমাজ কল্যান সংস্থা, জনস্বার্থ ফাউন্ডেশন, স্বপ্নের সিড়িঁ সমাজ কল্যান সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন উপরোক্ত দাবি জানানো হয়।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ এর সভাপতি আমির হাসান মাসুদ এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, স্বচেতন নগরবাসীর সভাপতি রোস্তম খান, সুবন্ধন সমাজ কল্যান সংস্থার সভাপতি হাবিবুর রহমান, স্বপ্নের সিড়িঁ সমাজ কল্যান সংস্থার সাধারন সম্পাদক উম্মে সালমা, অরুণোদয়ের তরুণ দল এর সভাপতি সহিদুল ইসলাম বাবূ, জনস্বার্থ ফাউন্ডেশন এর সাধারন সম্পাদক তুষার হাসনাত, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেন, নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সুজন কামরাঙ্গীরচর থানার দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, মৌসুমী ফলের কুড়িঁ থেকে শুরু করে পাকা এবং বাজারজাত করন পর্যন্ত অত্যাধিক ও নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জনগণ গুরুতর স্বাস্থ সমস্যার উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ বাড়ছে। এতে জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ পেটের পীড়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যানসারসহ দীঘর্ মেয়াদি নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু এবং বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী। জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও ভেজালমুক্ত খাদ্য যেন দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ভেজাল খাদ্যপণ্য বাজারজাত করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মানুষ হচ্ছে নীরব হত্যাকান্ডের শিকার। এই ভেজাল সন্ত্রাসে আতঙ্কিত ক্রেতা-ভোক্তা। ভেজাল খাবার খেয়ে নিজেদের অজান্তেই অনেকের দেহে বাসা বাঁধছে নানা রকম মরণব্যাধি। বেড়ে যাচ্ছে নতুন নতুন রোগ ও আক্রান্তের সংখ্যা। পণ্যমূল্যের এই উর্ধগতিতে কষ্টার্জিত টাকার বড় অংশ চলে যাচ্ছে অনাকাঙ্খিত চিকিৎসা খাতে। রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভেজাল খাবার খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে দেখা দেয়। সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে তাই খুব বেশি সচেতন থাকেন না। এ সব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় আক্রান্তদের অনেকেই উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন না। ফলে আক্রান্তদের অধিকাংশই পঙ্গুত্ব বরন করছে আথবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
রোগ এবং অকাল মৃত্যু থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও সামাজিক আন্দোলন থেকে শুরু করে সব কিছু করা দরকার। খাদ্যে ভেজাল সমস্যাকে সন্ত্রাস এবং জংঙ্গীবাদের মত গুরুত্ব দিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। কারণ যেই জনগনের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারের এত পরিকল্পনা সেই জনগণই যদি সুস্থ না থাকে তাহলে সব পরিকল্পনা অর্থহীন হয়ে যাবে।এর জন্য যা প্রয়োজন সেটা হল সচেতনতা এবং সকলের আন্তরিক উদ্যোগ । তাই দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্বে কাজ করতে হবে। একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি সুস্থ ও প্রানোচ্ছল আগামী প্রজন্ম। তাই আগামী প্রজন্মকে বাঁচানোর স্বার্থে আমাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading