এসেছে বাংলার ওয়াইল্ড মেন্টর

ফারজানা হালিম নির্জন

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে আমরা বসবাস করছি। প্রায় পুরো পৃথিবীই ছোট্ট একটা চারকোণা পর্দায় সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। বহু সময় কেটে যাচ্ছে এই জাদুকরী রঙ্গিন পর্দায় চোখে রেখে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে জানা-অজানার বিপুল সমুদ্রে সাঁতার কাঁটবার নেশায় কেউ কেউ কাজ করে যাচ্ছেন নিজের দায়িত্ববোধ থেকে, সকলের কল্যাণে। একটি চমৎকার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলবো আজ। “বাংলাদেশ ওয়াইল্ড মেন্টর” নামের এই অ্যাপটি বাংলাদেশের প্রথম বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিষয়ক মোবাইল অ্যাপ। এটি তৈরির পেছনের প্রধান কারিগর, বাংলেদশেরই এক তরুণ, মোঃ শফিকুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে জার্মানীর মিউনিখে জার্মান বারকোড অব লাইফে কাজ করছেন।

“প্রকৃতি কে জানো” বা “KNOW TO CONSERVE” এই শ্লোগান কে সাথে নিয়ে চলতি বছরের শেষপ্রান্তে, ১২ই নভেম্বর মোবাইল অ্যাপটি যাত্রা শুরু করে। এর লোগো তে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় প্রাণির অর্ধেক ছায়াচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। এমনটি কেন, জানতে চাইলে শফিকুল জানান, বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণির নাম নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। তাঁরা একটি গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণির নাম বলেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, প্রকৃতপক্ষে এই নামে কোনো প্রাণিই পৃথিবীতে নেই বলে তাঁরা জানান। বরং বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণির নাম শুধুমাত্র “বেঙ্গল টাইগার”। এই বিভ্রান্তি সংস্কারের চেষ্টাতেই তাঁরা অ্যাপটির লোগোতে বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতির অর্ধেক অংশ ব্যবহার করেছেন। এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে সহজেই ডাউনলোড করে নেয়া যাবে, মাত্র ৮ মেগাবাইটের এই অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেমটি সকলের জন্য ফ্রি। “বাংলাদেশ ওয়াইল্ড মেন্টর”- এ কী কী  আছে, সে সম্পর্কে একটু জানা প্রয়োজন।

এই অ্যাপটির প্রধান উদ্দেশ্য, বিভিন্ন প্রাণির সামগ্রিক বিবৃতি উপস্থাপন। বৈজ্ঞানিক নাম থেকে শুরু করে, কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রাণির বিভিন্ন বয়সের ছবি, স্বভাব, আচরণ, আকার-আকৃতি, রঙ, খাদ্য, ইত্যাদি সামগ্রিক ধারণা পাওয়া যাবে এখানে খুব সহজেই। এমনকি পৃথিবীর কোথায় কোথায় এর অস্তিত্ব আছে, সেটিও ম্যাপের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। যাত্রা শুরুর দিকে অ্যাপটিতে মূলত পাখি, বাঘ, আর ইলিশ মাছ এর পরিচিতি থাকলেও ধীরে ধীরে সরীসৃপ, উভচর, স্তন্যপায়ী, প্রজাপতি, সব ধরণের প্রাণির সংকলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাণি পরিচিতির বাইরেও অ্যাপটির আরো একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এখানে পাঠক এবং দর্শকদের জন্য সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। নিজ নিজ এলাকায় কী কী প্রাণি দেখা হয়েছে সেটি গবেষকদলকে সহজেই জানানোর উপায় এখানে আছে, এরই ফলাফলস্বরূপ তাঁরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাঠককে জানিয়ে দিতে পারবেন, ঐ প্রাণিটির বিস্তার পাঠকের এলাকায় কেমন। এইরকম সহজ উপায়েই যে কেউ তাঁর আশ-পাশের যে কোনো প্রাণির বিস্তার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন অ্যাপটির মাধ্যমে। এছাড়া ইমেইলের মাধ্যমেও বাংলাদেশ ওয়াইল্ড মেন্টর দলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা তো আছেই। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র ইংরেজি মাধ্যমে থাকলেও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁরা বাংলা ভাষা নতুন মাধ্যম হিসেবে যুক্ত করবেন।

মোঃ শফিকুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশ ওয়াইল্ড মেন্টর’ দলের উদ্যোক্তা, যিনি প্রথম এরকম একটি মোবাইল অ্যাপের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন নিজ ভূখন্ডের মাটিতে। স্বপ্ন দেখার শুরু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই, যখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত। তখন থেকেই একটু একটু করে পরিকল্পনা আর গবেষণা শুরু করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা করে করে যাত্রার পথ সুগম করেন। পরবর্তীতে সাথে ছিলেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব মিউনিখ। আর গবেষক দলের মূলে জার্মান, আমেরিকা, স্পেন, পেরু, বাংলাদেশ, ইতালি এবং নেপালের ২৭ জন তরুণ আছেন, যারা ২০১২ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন, বর্তমানে প্রত্যেকেই বিভিন্ন দেশে পিএইচডি শেষ করার অপেক্ষায়।

বাংলাদেশের প্রথম সিটিজেন সায়েন্স নির্ভর এই মোবাইল অ্যাপটির উদ্বোধন হয় জার্মানীতে। সেই ঝলমলে আয়োজনে, জার্মানীতে একখন্ড আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে শফিকুল নিজের তৈরি এই মোবাইল অ্যাপলিকেশনটির আলোকচ্ছটা ও তাঁর স্বপ্নের কথা এভাবেই ব্যক্ত করেন, “বণ্যপ্রাণি ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এটি হতে পারে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যেখানে সাধারণ জনগণ নিজেরাই সরাসরি কাজ করবেন অ্যাপটিতে আর গবেষকগণ হবেন তাঁদের মেন্টরস !”

Check Also

মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা !

এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে অনেক ঔষধ  Naegleria fowleri  (নেগেইলারিয়া ফাউলিরি) এর বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে, তাদের কার্যকারিতা অস্পষ্ট; কারণ প্রায় সব সংক্রমণই মরণঘাতি।

অসাধু ব্যবসায়ীক চক্রেই ভেজাল ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা সাধারণ

পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট এর ফল পরীক্ষার তথ্যানুযায়ীই বলতে হয় যে, এ দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল এবং দেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই চিহ্নিত হয়েছে। সারা দেশ থেকেই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্য দ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *