মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা !

রাহুল দাশ তালুকদার

“মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা” নাম শুনলে সবারই ভয়ে আঁতকে উঠার কথা অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন রুপকথার কোন ভয়ঙ্কর প্রানি বা দৈত্যের কথা কিন্তু  না, এটা কোন কাল্পনিক প্রানি বা দৈত্য নয়, বাস্তবে এর অস্তিত্ব রয়েছে মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা প্রোটোজোয়া পর্বের এককোষী মুক্তজীবী প্রাণি আমরা যারা এইচএসসি তে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছি, আমাদের সবারই অ্যামিবা সম্পর্কে কম বেশি ধারণা রয়েছে মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা-এর বৈজ্ঞানিক নাম নেগেইলারিয়া ফাউলিরি (Naegleria fowleri)   যা প্যারকলোজোয়া পর্বের এবং নেগলেরিয়া গণের অন্তর্গত এই ক্ষতিকারক পরজীবী সাধারণত উষ্ণ এবং গরম মিঠা পানির পুকুর, হ্রদ এবং নদী এবং গরম পানির ঝর্ণাতেও পাওয়া যায় তাছাড়া ক্লোরিনবিহীন সুইমিং পুলের মধ্যেও পাওয়া যায়

পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে তার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় সর্বপ্রথম এই অ্যামিবাটি ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চিহ্নিত হয়েছিল কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবিষ্কৃত হয় বলে ধারণা করা হয়

এই অ্যামিবা দ্বারা আক্রান্ত হবার ফলে আকস্মিক মস্তিস্কে সংক্রমণ হয় যা প্রাথমিকভাবে প্রাইমা্রি অ্যামিবিক মেনিনজিওএন্সেফালাইটিস নামেও পরিচিত, যাকে সংক্ষেপে পিএএম বলা হয়

ইনফেকশন সবচেয়ে বেশি ঘটে যখন পানির এই পরজীবী (Naegleria fowleri) শ্বাসের মাধ্যমে নাকের মধ্য প্রবেশ করে যা অলফেক্টরী স্নায়ু কোষে পৌছে সমগ্র মস্তিস্ক ভ্রমন করে সাধারণত এই ভয়ঙ্কর পরজীবী ব্যাকটেরিয়া ভক্ষণ করে, কিন্তু মানুষের দেহে সংক্রমণের সময় বিভিন্ন ধরণের স্নায়ু কোষ ও নিউরন ভক্ষণ করে থাকে

পরজীবীর ফ্লাজেলা মানবদেহে প্রবেশের ১ থেকে ৯ দিনের (গড়ে ৫ দিন) মধ্যে রোগের লক্ষনগুলো দেখা দেয় লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, জ্বর এবং বমি বমি ভাব ইত্যাদি পরবর্তী উপসর্গগুলির মধ্যে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, মনোযোগের অভাব, ভারসাম্য হ্রাস, ভ্রান্তি ইত্যাদি একবার উপসর্গ দেখা দিলে সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার প্রায় ৯৭ ভাগ এর বেশি ১৯৬২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন যাদের মধ্যে মাত্র ৪ জন বেঁচে আছেন।

এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই কিন্তু ল্যাবরেটরিতে অনেক ঔষধ  Naegleria fowleri  (নেগেইলারিয়া ফাউলিরি) এর বিরুদ্ধে কার্যকর তবে, তাদের কার্যকারিতা অস্পষ্ট; কারণ প্রায় সব সংক্রমণই মরণঘাতি সম্প্রতি, নিউইলেলারিয়া আক্রান্ত দুই ব্যক্তিকে মিল্টেফোসিন নামক একটি নতুন ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পরে বেঁচে যান

তবে আশার কথা হচ্ছে, পিএএমের আক্রমণ পৃথিবীতে বিরল এবং এ রোগ ছোঁয়াচে নয়।। এক দশকে মাত্র ৩৫টি রিপোর্ট পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে

Related Articles

One Comment

Leave a Reply to Ripon Ghosh Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading