ভোলায় ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের রেশ কাটতে না কাটতেই টানা বর্ষণও ক্ষতি করেছে ফসলের

॥ নীরব মোল্লা ॥

images‘আশা ছিল এইবার ধান ভাল অইলে হেই ধান বেইচ্যা যেই টাকা পামু হেই টাকা দিয়া ঘরের চালা লাগাইমু। কিন্তু মহাসেনের পর জোয়াইর‌্যার পানিতে ধান ডুবাইয়া দিছে। সব ধান নষ্ট অইয়া গেছে। পানিতে ধানের আগা-গোড়া সব পইচ্যা গেছে। পানির লইগ্যা ধান কাডন যায় নাই। পানির আগে যারা ধান কাটছে হেরাই ভাল ধান পাইছে। আমরা অহন পথে বইয়া গেছি।’
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের পর পূর্ণিমার জোয়ার আর টানা বর্ষণে ধানের ক্ষতি হওয়ায় হতাশ হয়ে এভাবেই কথাগুলো বললেন সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিক চাষী মোঃ আবু তাহের।
তিনি জানান, সাড়ে ৯ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে পাঁচ গন্ডা জমিতে ইরি ধানের চাষ করেছিলেন তিনি। এতে শুধুমাত্র পানির স্কীমে তার ব্যয় হয় সাড়ে সাত হাজার টাকা। আর বীজ, সার ও ওষুধে ব্যয় হয় দুই হাজার টাকা। তার আশা ছিল টানা বর্ষণ না হলে ওই জমিতে কমপক্ষে ৩০ মণ ধান হতো। প্রতি মণ ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হলে তা ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যেত।
এসময় একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় করে ১০ গন্ডা আউশ ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তার আউশ সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
অপর কৃষক মোঃ মোস্তফা বলেন, ‘২০ হাজার টাকা খরচ কইরা এক একর জমিতে ইরি ধান লাগাইছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলাইয়া অর্ধেক ধানই নষ্ট অইয়া গেছে। এক একর জমিতে ৬০ মণ ধানের আশা করছিলাম। অহন ২০ মণ ধান অইতারে। ধানে যা খরচ করছি হেতে চালানই আইবোনা।’
ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, তিনি প্রথমে প্রায় দুই হাজার টাকা দিয়ে জমিতে এক মণ দুই কেজি আউশ ধানের বীজ বুনেছিলেন। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের সময় জোয়ারের পানিতে তা পঁচে যায়। এরপর ১৫ দিন আগে উঁচু জমিতে নতুন করে আউশ ধানের বীজ বুনেন। কিন্তু সর্বনাশা জোয়ারের পানিতে সব আশা নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে আমাগো যে ক্ষতি অইছে হেরপর গত কয়েকদিনের জোয়াইর‌্যার পানিতে হেইয়ার তিন গুণ ক্ষতি অইছে।’
এ ব্যাপারে ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শষ্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ দেব দুলাল ঢালী জানান, মহাসেন পরবর্তী টানা বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে মাঠের ফসলী জমির ভেতর আউশ ধান, বাদাম ও পানের বরজ প্লাবিত হয়েছে। মহাসেন পরবর্তী দুর্যোগে ৫০ ভাগ জমি আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে এবার আউশের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ধান (উফসী) ২৩ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের চাষাবাদ হয়েছে। এই কৃষিবিদ আরো বলেন, ধান ক্ষেত অপেক্ষাকৃত বেশী পানি সহ্য করতে পারে। তাই এরপর আর বৃষ্টি না হলে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরো জানান, পানের আবাদ হয়েছে ৫৩৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৫০ ভাগ পানের বরজ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এখন আবহওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের পাশে থেকে তাদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে ভোলা জেলায় ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ১৫ হাজার ২২৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে চিনা বাদামের। জেলায় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার বাদাম ক্ষতি হয়েছে। এবার ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমিই দুর্যোগকবলিত।

সূত্রঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ০৯/০৬/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading