সত্যিই,বন্যেরা বনেই সুন্দর…

ফারজানা হালিম নির্জন 

মা ভাল্লুককে জড়িয়ে ধরে মুখ গুজে আদর নিতে চাইছে বাচ্চা ভাল্লুক দু’টি। আর ওদিকে আরেক ছানা বরফের উপর লুটোপুটি খেয়ে পড়ে আছে। মা’র শরীরে উঠতে না পেরে বেচারা করুণ চোখে মা’য়ের দিকে তাকিয়ে আছে। যারা মা’এর মুখের কাছাকাছি পৌঁছুতে পেরেছে,তাদের চোখে মুখে বিজয়ের আনন্দ। আর মা ভাল্লুক যেন বাচ্চাদের এই দুষ্টুমি খুব উপভোগ করছেন। তার জীবনের সমস্ত আনন্দ যেন ঠিক এমন একটা মুহুর্তকে ঘিরেই। আর কী প্রয়োজন এই জীবনে?

নিচের ছবিটি দেখে কি তাই মনে হচ্ছেনা? BhySXFvCQAIFTpw

 সত্যিই তাদের আর কিছুরই প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র তাদেরকে একটু একান্ত তাদের মত করে থাকতে দেয়া। এর বাইরে তারা যে আর কিছুই চায়না। আর খাওয়া দাওয়া? সেটুক তারা নিজেরাই তো জোগার করে নেয়। বলছিলাম বন্যপ্রাণীদের কথা। আর হ্যা,পশু-পাখি ছাড়াও আমাদের আরেক বন্ধু বৃক্ষরাজির আবদারটাও কিন্তু শুনতে হবে। বন্যপ্রাণী মানেই তো ফাউনা আর ফ্লোরা।

বন্যপ্রাণীদের কথা বিবেচনায় এনে,গেলো বছর ২০১৩ এর ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬৮ তম অধিবেশনে নিয়ে নেয়া হলো একটি মহৎ সিদ্ধান্ত। এখন থেকে প্রতিবছর ৩ রা মার্চ পৃথিবীর সকল বন্যপ্রাণীদের জন্য দিনটি স্মরণীয় করে রাখার ঘোষণা দেয়া হলো। অর্থাৎ আমরা যেমনভাবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কিংবা বিশ্ব মা দিবস পালন করি,তেমনিভাবে প্রতিবছর ৩ রা মার্চ পালন করবো ‘বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস’। মানব সম্প্রদায়ের নেওয়া এই দারুন সিদ্ধান্তটি যদি বন্যপ্রাণীরা কোনভাবে জানতে পারতো,তবে তারা নিশ্চয়ই খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারতো,আমরা তাদের নিয়ে কতটা চিন্তিত! কে জানে,হয়তো বা তারা জেনেও থাকতে পারে! BhkzoNXCYAAnD2S

এই দিনটি কেন হুট করে ঘোষণা করা হলো,এর পেছনে নিশ্চয়ই কতগুলো কারণ আছে। সেগুলো উপলব্ধি করার মত মন-মানসিকতা নিঃসন্দেহে আমাদের সকলেরই আছে। তাদের প্রতি আরও একটু সচেতন হওয়া,কোনোরকম স্বার্থ ছাড়া শুধু শুধুই তাদের কোনো ক্ষতি না করা কিংবা তাদের নিজস্ব জীবনে শত্রুর মত না এগিয়ে বন্ধুর মত আচরণ করা। এর বেশি কিছুর দরকার নেই। এতোটুকু সচেতনতা আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যই মূলত জাতিসংঘ এই দিবসটির ঘোষণা দিয়েছে। তার পাশাপাশি “ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম” অর্থাৎ বন্যপ্রাণীদের সাথে যে ঘৃণিত অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে,হচ্ছে কিংবা ভবিষ্যতে যদি হয়,তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্যও দিনটি একটি উপলক্ষ্য মাত্র। বন্যপ্রাণীদের সাথে মানুষের যোগাযোগ আজ,কাল,পরশু থেকে নয়;সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই। আমাদের জীবনের সামাজিক,সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক,শিক্ষা কিংবা নিছক বিনোদনের ক্ষেত্রেও তাদের অবদান অনেকটা অংশ জুড়ে। বিনিময়ে তাদেরকে কতটুকুই বা দিচ্ছি আমরা? প্রশ্নটা একবার নিজের মনের কাছে ফেরত পাঠালেই বুঝতে পারবো,উত্তরটা খুব একটা সন্তোষজনক হবেনা হয়তো।

অনেকসময় বন্যপ্রাণীদের কিছু গোষ্টিকে হিংস্রতার বৈশিষ্ট্যে ঢেকে রাখে প্রকৃতি,যা আমরা সচরাচর দেখি আমাদের চোখের সামনে। কিন্তু একটিবার যদি উপলব্ধি করা যেতো,তারা কতটা অসহায় নিজেদের জগতে,কতটা প্রতিকূল পরিবেশে তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে দিনের পর দিন,আর সবকিছু ছাপিয়ে তাদের ভেতরও যে আছে প্রকৃতির আরেক রহস্যময় অনুভূতি,ভালোবাসা আর মায়া… যেদিন পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ এই উপলব্ধি নিজের মনে শক্তভাবে ঠাঁই দিতে পারবে,সেদিন হয়তো সত্যিই কার্যত কারণে এই দিবসটির আর আলাদা করে কোনো প্রয়োজন হবেনা! কারণ সেদিন থেকে প্রত্যেকটি দিনই যে হবে একটি একটি “বন্যপ্রাণী দিবস” কিংবা “মানুষ দিবস” অথবা “ভালোবাসা দিবস”! সেদিন আর কতদূরে ?

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading