সীসা মুক্ত রঙ চাইঃ শিশুদের আবেদন

“সীসা মুক্ত রং চাই, সীসা যুক্ত রংকে না বলুন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে শতাধিক শিশু- কিশোরের অংশগ্রহণে গতকাল ১০ জুলাই ২০১৪, বৃহস্পতিবার লালমাটিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মিলনয়তনে রং-এ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সীসার ব্যাবহার নিয়ে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহনকারী শিশু-কিশোরা সীসাযুক্ত রং উৎপাদন, আমদানী ও বিক্রি বন্ধের কঠোর আইন প্রনয়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানায়। এই দাবীতে তারা ”সীসা মুক্ত রং চাই”, ”রং-এ সীসার ব্যবহার বন্ধ করুন, আমাদের রক্ষা করুন” ইত্যাদি স্লোগান ও রং-এ সীসার বিভিন্ন চিত্রাঙ্কণের মাধ্যমে ১৫ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৪.৫ ফিট প্রস্থের একটি ক্যানভাস তৈরী করে।
যেহেতু শিশুরা রং- এ ব্যবহৃত সীসার সর্বাধিক ঝুকির সম্মুখিন তাই তাদের এবং অভিভাবকদের সচেতন করতে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন – এসডো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে রং-এ সীসার ব্যাবহার মানবদেহ ও পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়। এসডোর মহাসচিব ড. হোসেন শাহরিয়ার শিশুদের সীসা দূষন থেকে নিজেদের রক্ষা করার বিভিন্ন পদ্ধতি তুলে ধরেন।
এসডোর নির্বহী পরিচালক মিজ সিদ্দিকা সুলতানা বলেন- বাংলাদেশর প্রায় ৪.৭ কোটি শিশু বাসাবাড়ি, স্কুল ও খেলার জায়গায় রং- এর সীসা দূষণের কারনে আজ বিপদের সম্মুখীন। আমাদের শিশুরা ঘরে, স্কুলে ও খেলার জায়গা এর মাধ্যমে রংয়ের সংস্পর্শে আসছে। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অপূরণীয় ক্ষতি করছে।
এসময় বাংলাদেশ পেইন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) প্রতিনিধি জনাব মহিবউল্লাহ বলেন- আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি বিবেচনা করছি এবং সীসামুক্ত রং উৎপাদনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং আমরা এসডোর কর্মসূচীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছি এবং সীসামুক্ত রং উৎপাদন ও সচেতনতা কার্যক্রমে একাত্ততা প্রকাশ করছি।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী  শিশু-কিশোররা, অভিভাবক ও অতিথিবৃন্ধ সীসাযুক্ত রং বন্ধের দাবী  তুলছে ।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী শিশু-কিশোররা, অভিভাবক ও অতিথিবৃন্ধ সীসাযুক্ত রং বন্ধের দাবী তুলছে ।

লালমাটিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সাহা বলেন ”বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরত্ব দিয়ে আমাদেরকে এখনি রং-এ সীসার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, না হলে আমাদের ভবিষৎত প্রজন্ম হুমকীর মুখে চলে যাবে।
সীসা যখন রং-এ ব্যবহৃত হয় তখন সেই রংকে সীসাজাত রং বলা হয়। সীসা একটি বিষাক্ত ধাতু যা জীবদেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অনেক পুরাতন বাড়ির ভেতর ও বাইরের দেয়ালে সীসাযুক্ত রং এর প্রলেপ দেয়া থাকে। সাদা সীসা বা লেড কার্বনেট বাসাবাড়ীর কাঠের দেয়ালে একসময় রং করার কাজে ব্যবহৃত হতো। অন্যদিকে হলুদ লেড ক্রোমেট  রঙ্গিন রং প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
শিশুরা, বিশেষ করে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা সীসার বিষক্রিয়ার শিকার হয় বেশি। সীসা দূষণের প্রথমিক পথ হল সীসাযুক্ত রং এর ক্ষয়ে যাওয়া কণা। কিছ কিছু শিশু খাবার অযোগ্য জিনিসও খায়। সীসাযুক্ত রং এর কণা খাবার ফলে তারা আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
প্রায় সব বয়সের মানুষের জন্যই সীসা খুব ক্ষতিকর। এসডো বর্তমানে রং কোম্পানিগুলোর সাথে সরাসরি কাজ করছে, যাতে করে কারখানার শ্রমিকদেরও সীসার সংস্পর্শে আসা থেকে দূরে রাখা যায়। বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীরে সীসার ক্ষতির মাত্রা বেশি এবং এর প্রভাবগুলো অপরিবর্তনীয় এবং জীবনসঙ্গী হয়। যত ছোট শিশু তার শরীরে ক্ষতির মাত্রাও তত বেশি। গর্ভবস্থায়ও শিশুরা সীসার মারাতœক শিকার হতে পারে যখন গর্ভবতী মা সীসা দূষণের ফলে তার শরীর থেকে শিশুর শরীরে এর প্রভাব পড়ে। শিশুদের মানসিক ও আচরণগত উন্নতিতে সামান্য পরিমান সীসারও মারাতœক প্রভাব রয়েছে।
এসডো সম্প্রতিক একটি গভেষণা পেয়েছে যে বাংলাদেশের বাসা-বাড়ির/শোভা-বর্ধনকারী রং-এ বিপদজনক মাএার সীসা রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য বিপদজনক মাএা ৯০ পি পি এম থেকেও বেশী। ইউরোপিয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আইপেনের সহযোগীতায় বাংলাদেশে এসডো সীসামুক্ত রংয়ের দাবীতে ২০১০ সাল থেকে আন্দোলন ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে।
এ কারণে এসডো এবং আইপেন যৌথভাবে রং এ ব্যবহৃত সীসার মাত্রা সর্বোচ্চ ৯০ পিপিএম সুপারিশ করে, যা বিশ্বজুড়ে সবার জন্যই অর্জন করা খুব সহজ। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থার মতে রং-এ সীসার কোনো মাত্রকেই নিরাপদ বলা যাবে না, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাসাবাড়ীতে ব্যবহৃত রং এর সীসার মাত্র ৯০ পিপিএম এবং উৎপাদনকারীরা এই প্রকার রং বিশ্বের যে কোন দেশে রপ্তানী করতে পারবে। রং উৎপাদনকারীরা যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সীসা ব্যবহার না করে তবে রং এ সীসার মাত্রা অবশ্যই ৯০ পিপিএম এর নীচে হবে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুরা ও অভিবাকরা রং-এ সীসার ব্যবহার বন্ধে সরকারের কাছে দাবী জানান।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *