ইকো ফেস্টিভ্যাল ২০১৭; চলছে পরিবেশের জন্য আলোকচিত্র প্রদর্শনী !

দিব্য কান্তি দত্ত

উৎসবমুখর পরিবেশে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরে শুরু হয়ে গেল ‘এনভায়রনমেন্টমুভ ডটকম’ আয়োজিত ‘ইকো ফেস্টিভ্যাল-২০১৭’। সকাল সাড়ে দশটায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হক ফিতা কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন। আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং সেমিনার উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন ‘ওলায়েম শিপ ম্যানেজমেন্ট’ এর ক্যাপ্টেন কাওসার মোস্তফা। প্রধান অতিথি হিসেবে ড. এস এম ইমামুল হক ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর’ এর মহাপরিচালক ফাইজুল লতিফ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি আই পি) এর প্রফেশনাল অ্যাফেয়ার্স বোর্ডের সদস্য মনিজা বিশ্বাস, ‘বন সংরক্ষণ বিভাগ’ এর জাহিদুল কবির এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ এর শিক্ষক ড. এ এন এম আমিনুর রহমান।

আলোচনা সভার শুরুতেই বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি ড. এস এম ইমামুল হক। আয়োজনের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজন দেশের পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আলোকচিত্র প্রদর্শনীকে হাতিয়ার করে মানুষের মাঝে পরিবেশ বিষয়ক বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার এ উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানিয়ে তিনি ভবিষ্যতে আরো এ ধরনের আয়োজনের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এরপর বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর’ এর মহাপরিচালক ফাইজুল লতিফ চৌধুরী। “এই-যে ধরণী চেয়ে ব’সে আছে  ইহার মাধুরী বাড়াও হে”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই লাইনটি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ধরনীর সৌন্দর্য নির্ভর করছে আমাদের কর্মকান্ডের ওপর। পরিবেশ দূষণের একটি মূল কারণ যেমন আমাদের খামখেয়ালিপনা তেমনি আমাদের পরিবেশের প্রতি ন্যূনতম সচেতনতা এই ধরনীকে মাধুর্যময় করে তুলতে পারে। তিনি নিজেদের আহরিত জ্ঞানকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরামর্শ দেন। বক্তব্যের শেষে তিনি এনভায়রনমেন্টমুভের এই উদ্যেগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

পরবর্তীতে ‘বন সংরক্ষণ বিভাগ’ এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জাহিদুল কবির। মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জীববৈচিত্র্য কতটা হুমকির মুখে পড়ছে তা ব্যাখ্যা করে তিনি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পরিশেষে তিনি ‘ইকো ফেস্টিভ্যাল’র মত আরো অনেক আয়োজন দ্বারা মানুষের সচেতনতা তৈরিতে সবাই এগিয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘বি আই পি’র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মনিজা বিশ্বাস বলেন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নের কথা। উদ্যাম তারুণ্য এবং আকাশ ছোঁয়ার অদম্য ইচ্ছা দিয়ে তরুণেরা প্রকৃতি এবং পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের মাঝে বেলজিয়ামের গেন্ট থেকে এনভায়রনমেন্টমুভের প্রতিষ্ঠাতা তাওহীদ হোসাইনের পাঠানো বক্তব্য পাঠ করে শোনানো হয়। এতে তিনি এনভায়রনমেন্টমুভের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরার পাশাপাশি আয়োজনের সহযোগী, উৎসাহদাতা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের সভাপতি ক্যাপ্টেন কাওসার মোস্তফা তার বক্তব্যের মাধ্যমে সবাইকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এরপর ছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’র শিক্ষক ড. এ এন এম আমিনুর রহমান পরিচালিত সেমিনার। ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ’ বিষয়ের ওপর তিনি সেমিনারটি পরিচালনা করেন। এতে তিনি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর ওপর দৃষ্টিপাত করেন। সেমিনার শেষে তিনি বিলুপ্তির মাত্রা বোঝাতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১৯ প্রজাতির পাখি হারিয়ে গেছে। এরকম চলতে থাকলে কয়েক বছর পর হয়ত অতিপরিচিত কিছু প্রাণীও হারিয়ে যাবে আমাদের মাঝ থেকে। তখন হয়তো পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবে। এজন্য তিনি সবাইকে অতিসত্ত্বর এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য উপদেশ দেন।

আলোচনা সভা শেষে প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অন্যান্যদের পাশাপাশি অতিথিরাও গ্যালারিতে সবার সাথে আলোকচিত্রগুলো উপভোগ করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রদর্শনীটি আজ এবং আগামীকাল সারাদিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *