উপকূলে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা : দশ জেলায় ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত আজ দুপুরে অতিক্রম করবে উপকূল সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাসিন্দাদের

মিজানুর রহমান
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ আজ দুপুর নাগাদ পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির গতি কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে ঘূর্ণিঝড়টির বর্ধিতাংশের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে গতকাল বুধবার রাত থেকেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপকূলীয় ১০ জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরেও দেয়া হয়েছে রেড এলার্ট-থ্রি। এ অবস্থায় উপকূলবাসীকে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী সব ধরনের নৌযান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ২২টি জাহাজ। বিমানবাহিনীও প্রস্তুত রেখেছে ৯টি যাত্রীবাহী বিমান ও ১৯টি হেলিকপ্টার। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় নোয়াখালী, কোম্পানিগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে ভারি বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা ও নিুাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের কথা বলা হয়েছে। গতকাল রাত দেড়টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ দুপুর নাগাদ খেপুপাড়া ও টেকনাফ উপকূলের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে এলে এর গতি-প্রকৃতি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সর্বশেষ আবহাওয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী,  চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলা এবং এর কাছের দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলাসমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারিবর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় ভারিবর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এদিকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি দফতরকে। একই সঙ্গে এসব দফতরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দুর্গতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ১ হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক।  দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ২২টি জাহাজ।
৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণার পর দুপুর ১২টা থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন উপকূলীয় উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, সদর উপজেলা, উখিয়া ও টেকনাফের অধিবাসীদের দ্রুত সরিয়ে আনার কাজ শুরু করে। একই সময় লক্ষ্মীপুরের দুর্গম চরাঞ্চল থেকে ২২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে দ্বীপবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। বরিশাল নৌবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৭৮টি ঘাট থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় হাতিয়ার বয়ারচর চেয়ারম্যানঘাট পুলিশ ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ১৬/০৫/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *