বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগে নগরবাসী

শামসুজ্জামান শামস

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় গতকাল মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকা, জরাজীর্ণ রাস্তার সংস্কার না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় সব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে যায়। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় এ অবস্থার কারণে পথচারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে জুতা হাতে নিয়ে অনেকেই পার হন পানি জমে থাকা স্থানটি। মতিঝিলের ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ এলাকায়। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই এ এলাকার মূল রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কখনো হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে রাস্তায়। হাঁটুসমান পানি পার হয়েই অফিসে আসতে হয়েছে।
অনেকেই আবার রিকশার সহায়তা নেন। তবে এক্ষেত্রে প্রতিদিনের চেয়ে একটু বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাদের।
এছাড়া মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বাড্ডা, পুরান ঢাকার নারিন্দা, সদরঘাট, হোসনী দালান, নাজিমউদ্দিন রোড, চকবাজার, বেগুনবাজার, আরমানীটোলা, বিসিসি রোড, ইমামগঞ্জ, বংশাল, মাহুত টুলী, ছিক্কাটোলা, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, গেণ্ডারিয়াসহ মতিঝিল, ধানমন্ডি, আজিমপুর ও যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকার বাসিন্দা অভি হাসান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সাড়ে ১১-এর
বাসস্ট্যান্ডে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পর্যন্ত পানি জমায় বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন দুটি মার্কেট, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পথচারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সকাল থেকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ছাতা বা বর্ষাতি পরেই ঘর থেকে বের হন অনেকে। বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী ছিল কম। বৃষ্টির কারণে ফুটপাতের খুচরা ব্যবসায়ীরাও খুলতে পারেননি দোকান। দোকান খুলতে না পারায় চায়ের দোকানে তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়।
রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, বিয়ের ট্রিপ আছে। ফুল দিয়ে গাড়ি সাজাতে হবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে ঘর থেকে মানুষও কম বের হয়। ওই দিন ব্যবসাও ঠিকমতো হয় না। ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে কাপড় ব্যবসায়ী রমজান শেখ বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে বসে আছি। লোকজন নেই, ব্যবসাও নেই। হরতালে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। এখন আবার মহাসেন। ব্যবসা না করতে পারলে খামু কী।’
এছাড়া স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেশি। দুপুরের দিকে যারা স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়, তাদের অনেকের সঙ্গে ছাতা না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।
পানি অপসারণে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ: জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক গতকাল দুপুরে ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) ও ঢাকা ওয়াসাকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দ্রুত পানি অপসারণের নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
 সূত্রঃ বণিক বার্তা  ১৭/০৫/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *