টানা বর্ষণে সুবর্ণচরে সয়াবিনের ব্যাপক ক্ষতি

অমৃত লাল ভৌমিক নোয়াখালী
‘গত বছর ভালো লাভ পেয়ে এবার দেড় বিঘা জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। ফলনও পেয়েছি ভালো। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের টানা বর্ষণে জমিতে পানি জমে বেশির ভাগ সয়াবিন পচে গেছে। মাত্র আধা বিঘা জমির সয়াবিন পেয়েছি, যা বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই পাব না। কীভাবে সুদের টাকা পরিশোধ করব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকার ক্ষতিপূরণ দিলে হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে যাব।’ কথাগুলো বলছিলেন সুবর্ণচর উপজেলার পশ্চিম চরজব্বর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন। শুধু গিয়াস উদ্দিন নয়, হাজারেরও বেশি কৃষক এবার লাভের আশায় সয়াবিন চাষ করে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ধরা হলেও সয়াবিন চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টরে, যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। গত বছর ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার সয়াবিন চাষ বেশি করেন। আমন মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু ধান নষ্ট হয়। আবার দাম কম হওয়ায় আমনেও লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষককে। এদিকে এ উপজেলায় পানির অভাবে বোরো চাষ করাও সম্ভব হয় না। এসব কারণে রবি শস্য চাষে কৃষকরা  ঝুঁকছেন।
এবার বৈশাখের শেষ ও জ্যৈষ্ঠের শুরুতে বৃষ্টির পানিতে পাকা সয়াবিনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে লোকসানে পড়তে হয়েছে কৃষককে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বৃষ্টির কারণে এবার সুবর্ণচরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা সয়াবিন নষ্ট হয়েছে। সরজমিনে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির সয়াবিন পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়েছে। আর দুই হাজার হেক্টর জমির সয়াবিন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষকদের ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার মতো আর্থিক লোকসান গুনতে হবে বলে শতাধিক কৃষক জানান।
চরজুবলী গ্রামের কৃষক হাফেজ আহম্মদ জানান, গত বছর ভালো ফলন হওয়ায় এবার দেড় একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন তিনি। এবারো ফলন বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু মহাসেন আঘাত হানার কয়েক দিন আগে থেকে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে যায়। তিনি জানান, এবার তার সয়াবিন চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫-২৮ হাজার টাকা। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে মাঠ থেকে সয়াবিন ওঠানো শুরু হয়েছে। প্রায় এক কানি জমির ফসল পানিতে নষ্ট হয়েছে। পুরো জমির ফসল ওঠাতে পারলে প্রায় ৬০ মণ সয়াবিন পেতেন। সেগুলো বিক্রি করতে পারতেন ৯০ হাজার টাকায়। এতে খরচ পুষিয়ে লাভও পেতেন।
কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে লাভ তো দূরে থাক, উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এবার সয়াবিন চাষী প্রায় ১০ শতাংশ কৃষককে লোকসান গুনতে হবে এমনটা নিশ্চিত করে সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত এটা সত্য। তবে সে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া সরকারিভাবে হয়তো সম্ভব নয়। তবে আগামী মৌসুমের আগে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে। যদি সরকার বিনামূল্যে কৃষকদের জন্য বীজ, কীটনাশক ও সার প্রদান করেন, তাহলে সেগুলো কৃষকদের দেয়া হবে। তখন হয়তো কৃষক কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

সূত্রঃ বণিক বার্তা ২২/০৫/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *