রাসায়নিক ছাড়া একটি আপেল পাওয়া যাবে না বাজারে
আবুল খায়ের
রাজধানীসহ দেশের আনাচে কানাচে সব ফলের দোকানে সারা বছর বিক্রি হয় আপেল। কিন্তু সুস্বাদু এই ফলটিতেই সবচেয়ে বেশি মেশানো হয় রাসায়নিক। বিদেশ থেকে আপেল আমদানির পর এ দেশীয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা আপেলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশান সারা বছর বিক্রির উদ্দেশে। রাসায়নিক মেশানোর পর আপেল থাকে টাটকা ও সজীব।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু, ক্যান্সার ও কিডনি বিভাগ এবং মহাখালী ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, প্রতিদিন শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সার জন্য আসছে। মূলত রাসায়নিকযুক্ত ফল খেয়ে রোগীরা নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আগে যে ধরনের রোগী আসত তারচেয়ে এখনকার রোগী পুরোপুরি ভিন্ন।
রাজধানীর বিভিন্ন ফলের বাজারে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আপেল সম্পর্কে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তারা জানান, বিদেশ থেকে আপেল আমদানি করে আনার পর আড়তে ওঠানো হয়। সেই আপেলে সাধারণত দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের বেশি সময় রাখা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন রেখে বিক্রির জন্য ও পচন রোধে কেমিক্যাল ও ফরমালিন সংমিশ্রনে তৈরি বিষাক্ত উপাদান স্প্রে করে আপেলে একবার দিলেই যথেষ্ট। স্প্রে করে আড়তের আলাদা গুদামে রেখে দেয়া হয় আপেল। পরে সেই আপেল সারা বছর ধরে রাজধানী থেকে শুরু করে শহর ও গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।
বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ১ নম্বর, কাওরান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ফলের আড়তের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা আপেলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, আগে তারা কয়েক মাস বাজারে আপেল সরবরাহ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে আপেল গুদামে রেখে সারা বছর বিক্রি হচ্ছে। অসময়ে টাটকা ও তরতাজা আপেল পাচ্ছেন লোকজন। মুনাফা হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ।
তারা বলেন, বাজারে একটি আপেলও খুঁজে পাওয়া যাবে না যেটি রাসায়নিক মুক্ত। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট জরিমানা করে। এত মুনাফার মাঝে সামান্য জরিমানা দিতে সমস্যা হয় না বলে জানান দুই ব্যবসায়ী। তবে বাজারে বিক্রি করলেও নিজের সন্তানদের এসব ফল খেতে দেন না তারা।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (২৪/০৬/২০১৩)