‘ঈদে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ যাতায়াতে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

এনভায়রনমেন্টমুভ ডেস্ক

সড়কপথ প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ করা হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় রাস্তায় অসহনীয় যানজটে ঢাকাসহ সারা দেশের জনগণকে ঘন্টার পর ঘন্টা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রমজান ও ঈদে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় যানজট এবং পাল্লা দিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। ঘরমুখো মানুষ সড়কপথে মর্মান্তিক দূর্ঘটনাসহ রেল ও নৌপথে নানাভাবে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়। বিশেষ করে ঈদে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা আমাদেরকে আতংকিত করে। বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাবই এর জন্য মূলত দায়ী। এপ্রেক্ষিতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর উদ্যোগে আজ ১৪ জুন ২০১৭, বুধবার, সকাল ১১টায় পবা মিলনায়তনে আয়োজিত “ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতে করণীয়”-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান-এর সভাপতিত্বে এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন পবা’র সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, এম এ ওয়াহেদ, মর্ডান ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানত, পবা’র সদস্য রাজিয়া সামাদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান, পবা’র সহ-সম্পাদক নিশাত মাহমুদ, জাহিদুর রহমান, স্বচেতন নগরবাসী-এর সভাপতি জিএম রোস্তম খান, পবা’র সদস্য কায়সার আহমেদ, শামসুল ইসলাম চৌধুরী, বানিপা’র সভাপতি প্রকৌ. মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

পবা’র সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, প্রতি বছর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পরিবহন সেবা প্রদানকারীগণ ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারপরও ঈদকে সামনে রেখে যাতায়াত ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর বা রমজানের ঈদ। এবছর জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ ঢাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবে এবং পুনরায় ফিরে আসবে। পরিবার-পরিজন, মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগটি কেউই হাতছাড়া করতে চান না। ঈদকে কেন্দ্র করে মাত্র কয়েকটি দিন উপভোগ করতে যাওয়া মানুষের সকল আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয় যাতায়াতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে। তাই ঈদে দেশের সর্বত্র যাতায়াত ঝুঁকিমুক্ত, নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দময় করার জন্য সমন্বিত, বাস্তবধর্মী, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার প্রধান কারণ অতিরিক্ত যানবাহন, যানবাহনে অতিরিক্ত মালামাল পরিবহণ, ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিযুক্ত যান চলাচল, অদক্ষ চালক, চালকদের ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কে প্রদত্ত সংকেত অনুসরণ না করা, ঘনঘন লেন পরিবর্তন, ওভারটেকিং, বাস স্টপেজে এলোমেলোভাবে বাসে যাত্রী উঠানো-নামানো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক নির্মাণ, সড়কের বিভিন্নস্থান যান চলাচলের অনুপোযোগী, সড়ক পরিচালনা ও মেরামতের সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সড়কে প্রয়োজনীয় সংকেত ও নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ডের অভাব, ধীরগতির যান চলাচল, সড়ক দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, ট্রাফিক আইন প্রয়োগে শিথিলতা, দক্ষ ও লজিস্টিকস সমৃদ্ধ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব, আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের অভাব, ইত্যাদি।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ঈদে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া ও ফেরার ক্ষেত্রে সৃষ্ঠ সমস্যাসমূহঃ রেল,বাস ও লঞ্চের টিকেট কালোবাজারী ও টিকেট সংগ্রহে যাত্রীদের বিড়ম্বনার শিকার, বাস ও লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের সীমাহীন চাপের তুলনায় পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাব (রেলগাড়ি, মোটরযান ও নৌযান), যাত্রীদের যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় মহাসড়ক ও টার্মিনালে অবস্থান করা, রেলের শিডিউল বিপর্যয়ে রেলপথ ও ষ্টেশনে এবং নৌপথের নাব্যতা সংকটে নৌযান ও টার্মিনালে অবর্ণনীয় ভোগান্তি, রেলগাড়িতে ভীড়ের কারণে উঠা-নামাতে দুর্ভোগ। এছাড়াও নিয়ম-নীতি না মেনে ওভারটেকিং, ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করা, রেল ক্রসিং অতিক্রম করা, দ্রুতগতিতে বেপরোয়া যানবাহন চালানোর ফলে সড়ক দূর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। নৌযানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ফলে নৌ দূর্ঘটনা ঘটে থাকে।

প্রতিবছর রমজান মাসে ঢাকা শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যানজট ও যানবাহন সঙ্কটে নগরবাসীকে নাকাল হতে হয়। এই মাসে শহরের বাসিন্দা যে যেখানেই কাজ করুক না কেন দিনশেষে পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতার করতে চান। যা ধর্ম পালনের পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে। কিন্ত এই কাজটি করার জন্য নগরবাসীকে রীতিমত যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। এ রমজানে যানজট অন্যান্য বছরের চেয়ে প্রকট আকার ধারন করেছে। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভাঙাচোরা সড়ক, যত্রতত্র পাকিং, রাস্তায় সিটি করপোরেশনের আবর্জনার স্তুপ, ট্রাফিক ব্যবস্থ্ার দুর্বলতার সাথে যুক্ত হয়েছে জলাবদ্ধতা, সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম।

করণীয়

১। গার্মেন্টসসহ শ্রমিকঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ছুটি ঈদের আগে পরে ভাগ করে প্রদান করা। বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টসসহ শ্রমিকঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের মালিকগণ তাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐ এলাকার তিন ভাগের প্রথম ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঈদের ৩ (তিন) দিন আগে, তিন ভাগের দ্বিতীয় ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঈদের ২ (দুই) দিন আগে এবং তিন ভাগের শেষ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঈদের ১ (এক) দিন আগে ছুটি প্রদান করা এবং ঈদ পরবর্তী ছুটিও একইভাবে সমন্বয় করা। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা।
২। রেলগাড়ি, বাস ও নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। লক্কড়-ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিযুক্ত যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা এবং মাঠপর্যায়ে নজরধারীর মাধ্যমে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা
৩। রেল লাইন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা, রেলের বিদ্যমান লোকবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা, রেলের লোকোমটিভ ও যাত্রী কোচ মেরামতের জন্য রেল কারখানাগুলোতে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করা।
৪। রেল-সড়ক ক্রসিংগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫। সড়কপথ যথাযথভাবে মেরামত করা, সড়ক দখল করে পরিচালিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করা।
৬। ভূয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ ও শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা, অপরাধকারী চালকদের আইনের আওতায় আনা, ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিযুক্ত যান বাতিল করা, মোটরযানের ফিটনেস সঠিকভাবে পরীক্ষা করা।
৭। ওভারটেকিং, বেপরোয়া চালনা, ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করা, গতি নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, ট্রাফিক আইন ও সিগনাল মেনে চলার ক্ষেত্রে বাস চালকদের সর্তক করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা।
৮। ভূয়া লাইসেন্সধারী মোটরযান ও নৌযনের চালকদের নিষিদ্ধ করা।
৯। দূর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ও স্থানে যানবাহনের গতি, ওভারটেকিং ও বেপরোয়া চালনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি করা এবং আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এলক্ষ্যে ঈদের আগে ও পরে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।
১০। নদীপথের নাব্যতা ঠিক রাখা, নৌযানের ফিটনেস নিয়মিত চেক করা, অতিরিক্ত যাত্রী বহনে মালিক ও চালকদের সর্তক করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা।
১১। বাস টার্মিনাল, রেল ষ্টেশন, নৌ বন্দর, হাইওয়ে, রেল ও নৌযানে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনী নিয়োগ করা।
১২। রেল, বাস ও নৌযানের টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারীরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Check Also

মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা !

এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে অনেক ঔষধ  Naegleria fowleri  (নেগেইলারিয়া ফাউলিরি) এর বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে, তাদের কার্যকারিতা অস্পষ্ট; কারণ প্রায় সব সংক্রমণই মরণঘাতি।

অসাধু ব্যবসায়ীক চক্রেই ভেজাল ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা সাধারণ

পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট এর ফল পরীক্ষার তথ্যানুযায়ীই বলতে হয় যে, এ দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল এবং দেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই চিহ্নিত হয়েছে। সারা দেশ থেকেই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্য দ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *