রঙিন পাখি রাঙ্গামুড়ি

আলম শাইন
Red-crested-pochardস্বভাবে লাজুক। ভীরু। বাস মধ্য এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে। পরিযায়ী হয়ে আসে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। আমাদের দেশে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হাওর অঞ্চলে সুলভ দর্শন ঘটে। এ সময় হাওরের ওপর দিয়ে এরা নিঃশব্দে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে হাওরের আগাছাযুক্ত স্থানে লুকিয়ে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নেয়। তার পর দল বেঁধে শিকারে বের হয়। জলে ডুব দিয়ে শিকার খোঁজে। জলের কীটপতঙ্গ, ঘাসবীজ এসব খায়। মাছের প্রতি আসক্তি নেই বললেই চলে। সামুদ্রিক অঞ্চল বা লবণ জল এড়িয়ে চলে। সুপেয় জলেই এদের বিচরণ। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসা হাঁস প্রজাতির মধ্যে এরা সবচেয়ে বেশি সুন্দর পাখি। শীতে হাওর অঞ্চল মাতিয়ে রাখে। পাখি দেখিয়েদের প্রধান আকর্ষণ থাকে এদের দর্শন লাভ করা। আমাদের দেশে মোটামুটি সুলভ দর্শন ঘটে এদের। এক দশক আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে এদের উপস্থিতি অনেকটাই কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরা এতই ভীরু যে, একবার কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হলে বা ভয় পেলে আর ওই এলাকায় সহসাই ভিড়ে না। আর সেই কাজটিই করছেন এতদাঞ্চলের শিকারিরা। শিকারিদের অত্যাচারে এরা খুবই অতিষ্ঠ। নিপীড়ন বন্ধ না হলে হয়তো একদিন এ দেশে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে রাঙ্গামুড়ি পাখিদের। এ পাখির বাংলা নাম : ‘রাঙ্গামুড়ি’, ইংরেজি নাম : ‘রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড’ (Red-crested pochard), বৈজ্ঞানিক নাম : ‘রোডোনেসা রুফিনা’ (Rhodonessa rufina), গোত্রের নাম : ‘আনাটিদি’।
এরা রাঙাঝুঁটি হাঁস নামেও পরিচিত ।  লম্বায় ৫৩-৫৭ সেন্টিমিটার। ঠোঁট প্রবাল লাল।  গোলগাল মাথায় কদমফুলের মতো খোঁচা পালক। ঘাড়ের ওপরের অংশ ও গলার ওপরের দিক শেয়াল-কমলা মিশ্রিত। ফলে দূর থেকে লালচে দেখায়। গলার নিচের দিক থেকে কালো। ডানার ওপরের দিক হাল্কা বাদামি। ডানা প্রসারিত করলে সাদা পট্টি নজরে পড়ে। দেহের দু’পাশ সাদা। পা-আঙুল কমলা হলুদ। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির মাথার পালক বাদামি-সোনালী-কমলা রঙ হয়। ওই সময় চোখ উজ্জ্বল লাল বর্ণ ধারণ করে। স্ত্রী পাখির ঠোঁট কালো। ওপরের দিক বাদামি। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের পাশ দিয়ে গাঢ় বাদামি রঙ মাথা ও ঘাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। কপাল এবং গলা সাদা। ডানার ওপরটা সাদা, যা ওড়ার সময় নজরে পড়ে।
খাদ্য হিসাবে এরা গ্রহণ করে জলজ পোকামাকড়, ঘাসবীজ ইত্যাদি। প্রজনন সময় বসন্তের শেষদিকে। জলাশয়ের পাশে ঘাসের ওপরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফোটে ১৮-২০ দিনে।
লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবাদী লেখক। alamshine@gmail.com

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ১৪/০৮/২০১৩

Check Also

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস উদযাপন

জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং গবেষণায় তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে ২৯ এপ্রিল শনিবার দ্বিতীয়বারের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাচার ক্লাবের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস ২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত হয়ে গেলো আলোচনা সভা ও চিত্রপ্রদর্শনী

বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় চাইনিজ বনরুই; আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে গবেষণাপত্র প্রকাশিত

পরিবেশ সচেতন পাঠক, পার্বত্য চট্টগ্রামে বনরুই এর বর্তমান পরিস্থিতি হতাশাজনক হলেও, গবেষকগণ লাউয়াছড়ার মাটিতে বিভিন্ন গর্তে উঁকি মেরে তুলনামূলক আশার আলো বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন। লাউয়াছড়ায় চালানো বিভিন্ন গবেষণার ফল বলছে, এখানে এখনো তুলনামূলক বেশ সংখ্যক বনরুই নীরবে বসবাস করছে। এমনকি চা-বাগানের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মনোকালচার টি স্টেটে বনরুইদের সাক্ষাৎ প্রায়ই পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চমৎকার জীব-বৈচিত্র্যের ঠিকানা এই বাংলাদেশ থেকে বনরুই এর পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে কেন ! বনরুই-এর উদাহরণ সামনে রেখে বাংলাদেশে বন্যপ্রাণিদের দেখভাল সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, এই বিষয়ে একটু কি খটকা লাগছে না?

One comment

  1. রঙিন পাখি সম্পর্কে ভাল তথ্য শেয়ার করেছেন। রাঙ্গামুড়ি পাখি সম্পর্কে অনেক কিছু অজানা সাধারণ মানুষের। আমাদের ওয়েবসাইটেও এমন রঙিন পাখি নিয়ে আর্টিকেল রয়েছে। বিভিন্ন পাখি এবং প্রাণী সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *