খাল উদ্ধার ও খাল খেকোদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী

অপরিকল্পিত নগরায়নসহ ভূমিদস্যুদের বেপরোয়া কার্যক্রমে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঢাকার খালসমূহ। ঢাকার চারিপাশের খালসমূহ দখল ও দূষণে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে সরকারের কিছু উদ্যোগ ঢাকার খালসমূহ অবৈধ দখল উচ্ছেদে ভূমিকা রাখলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতায় উদ্ধারকৃত জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেসী মহল পুনরায় দখল করছে।

পূর্বে এই মহানগরে বেশিরভাগ খালেরই প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের অধিক। এগুলো দিয়ে নগরীর পানি নিষ্কাশন ও সহজে নৌকার সাহায্যে পণ্য পরিবহন করা হতো। কিন্তু বাস্তবে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশিরভাগ খাল বিলুপ্ত হয়েছে। আর যেগুলো খালের অস্তিত্ব আছে তা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে এবং দূষণে ভরপুর।

গত ১১ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, সকাল ১১.০০টায় শাহাবাগস্থ চারুকলা অনুষদের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) সহ ১৩ টি সংগঠনের উদ্যোগে ”খাল উদ্ধার কর ও খাল খেকোদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও” এই দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সকল দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার এবং খাল দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

নাগরিক সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাসফের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী, পবা’র সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মেদ উজ্জ¦ল, সহ-সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, মো. সেলিম, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, ইয়ুথ সানের সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, বিডি ক্লিক-এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, বানিপা’র সভাপতি মো: আনোয়ার হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ন কবির হিরু, কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, মো: মাহবুল হক, হাজী মো: আনসার অলী, নাসফের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: অহিদুর রহমান, প্রকৌ. মো: কামাল পাশা, বুরহান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরের ভিতরের ও চারপাশের খালগুলো রক্ষা এবং সচল করতে না পারলে জলাশয়বিহীন রাজধানীর জনপদ ও জনজীবনের জন্য তা বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেখা দিবে ভূমিকম্প, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্র্য। ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ নানা পরিবেশ সংকটের জন্ম দেবে। ইতোমধ্যে সংকট শুরু হয়ে গেছে।

শুধু পরিবেশ নয় জনজীবন ও অর্থনীতির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সার্বিক দিক থেকে আগামী দিনের ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এ বছর মাত্র ৪০-৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা হয়েছে। যা ঢাকাবাসীর ভোগান্তিকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সংকুচিত খাল ও অচল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাই এর মূল কারণ। তাই ঢাকার অস্তিত্ব রক্ষায় যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে অবিলম্বে ঢাকার অভ্যন্তরীণ এবং চারিদিকের জলাধারসমূহ রক্ষা করতে হবে এবং অচিরেই খাল ও জলাশয় সংস্কার করতে হবে। খাল ও জলাশয় কেবল মহানগরীর পানি ও বর্জ্য চলাচলের জন্যই প্রয়োজন নয়, জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক রাখা, তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সমস্যার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

ঢাকা শহরের খালগুলো ধ্বংসের একটি বড় কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিষয়ক উদাসীনতা এবং অজ্ঞতা। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ভরাট দখল করছে খাল পাড়ের স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু ও স্বার্থান্বেসী মহল। খাল/জলাধার ভরাট ও দখল করা পরিবেশ আইন ১৯৯৫ (সংশোধন ২০১০), পরিবেশ নীতিমালা, বেঙ্গল ক্যানেল অ্যাক্ট ১৮৬৪, প্রাকৃতিক জলাধার আইন ২০১০ (ও অন্যান্য আইন, যদি থাকে) এর পরিপন্থি। এ সকল ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে খালগুলোকে রক্ষার পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী।

ঢাকার সব খালের মালিক জেলা প্রশাসনের, রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার এবং সিটি করর্পোরেশন সমন্বয়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫৮টি খাল চিহ্নিত করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩৭টি খালের অংশবিশেষ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) তিনটি সরকারি ও সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং ২৪৮ জন ব্যক্তি দখল করে নিয়েছে। ফলে খালগুলোর প্রবাহ আর ঠিক নেই। জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের ২২টি খালের মধ্যে একমাত্র ধোলাইখালের একটা অংশ (সূত্রাপুর লোহারপুল থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত) ও মেরাদিয়া খাল সচল আছে। বাকি সবগুলো খালের জায়গায় এখন রাস্তা।

রাজধানীর উত্তরাংশে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে একদিকে চলছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন খাল খনন প্রকল্প, অন্যদিকে একই এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বোয়ালিয়া খালের একটি অংশ ভরাট করে আবাসন প্রকল্প বাসন্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সমিতির বিরুদ্ধে। দুটি চিত্রই সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী। খিলক্ষেত এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি। কিন্তু ‘জলাধার আইন লঙ্ঘনের’ অভিযোগ এনে খালটি ভরাট না করার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গত এপ্রিলে সমিতিকে চিঠি দেয়। এখন পর্যন্ত খালের ভরাট হওয়া অংশ পূনরুদ্ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান।

মানববন্ধন থেকে নিম্নোক্ত দাবীগুলো উপস্থাপন করা হয়ঃ
১. খালের জায়গায় নতুন করে যাতে কোন স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
২. জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান আইন নীতিমালা সংশোধন ও তার বাস্তবায়নসহ সঠিকভাবে খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ সাপেক্ষে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে। অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩. খালসহ সব জলাশয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং সেই সাথে খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। তাছাড়াও পানির প্রবাহ স্বাভাবিক, দখল ও আচ্ছাদিত খাল পুনঃরুদ্ধার করতে হবে।

Check Also

বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবি

বিশ্ব নদী রক্ষা দিবস ২০১৭ উপলক্ষে ১৪ মার্চ বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল রক্ষা করার দাবিতে সকাল ১০:০০ টায় হাজারীবাগ পার্ক থেকে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল অভিমূখে পদযাত্রা এবং সমাবেশ করেছে পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ সহ ১৭টি পরিবেশবা

জলাতঙ্ক বিষয়ক সচেতনতা মূলক প্রচারণা প্রাধিকারের

জলাতঙ্ক নির্মূলের জন্য আমাদের নিজেদের প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে এবং সরকারি উদ্যোগে রাস্তার সকল কুকুরকে জলাতঙ্ক এর টিকা দিতে হবে। আর কোন কারণ ছাড়া কোন প্রাণীর কাছে গিয়ে তাকে ভয় দেখানো যাবে নাহ, এতে করে ঐ প্রাণির কামড়ানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে জলাতঙ্ক ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *