বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সবুজ অর্থনীতি !

তৌকির ইসলাম

প্রতি বছর ৫ জুন সারাবিশ্বে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং পরিবেশবিদরা এই দিন বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে থাকে যাতে সাধারণ মানুষ পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে পারে এবং একটি সবুজ পৃথিবী আগামী প্রজন্মকে উপহার দিতে পারে। এর ফলে ধীরে ধীরে এক শ্রেণির মানুষ আরও পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠছে।

প্রতি বছর এই দিন টির জন্য একটি থিম বা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয় এবং ২০১২ সালে এটি ছিল ‘সবুজ অর্থনীতি’। এখন সবার মনে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এই ‘সবুজ অর্থনীতি’ আবার কী? জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি অনুযায়ী, সবুজ অর্থনীতি মানুষের সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করে এবং পরিবেশগত ঝুঁকি কমায়। আরও সহজ ভাবে বলতে গেলে, সবুজ অর্থনীতি দক্ষতার সঙ্গে ন্যূনতম কার্বন নির্গমন করে বর্তমানের চাহিদা পূরণ করবে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে না।

এখন দেখা যাক বাংলাদেশে কী ঘটছে ! বিভিন্ন এন.জি.ও. যেমন, গ্রামীণ শক্তি এবং বিভিন্ন কোম্পানি যেমন, ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, (IDCOL) , ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইনান্স কোম্পানি লিমিটেড, (IIDFCL) এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই সবুজ প্রযুক্তিকে উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আমাদের মজুদ করা গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শক্তি উৎপাদনের জন্য বিকল্প কাঁচামাল খুঁজে বের করা প্রয়োজন। সীমিত কাঁচামাল সমৃদ্ধ দেশের জন্য সৌরশক্তি একটি অন্যতম সমাধান, এটি পরিবেশবান্ধবও বটে। ২০২১ সালের মধ্যে “সকলের জন্য বিদ্যুৎ”- সরকারি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক অভিনব পদ্ধতি যেন IDCOL তৈরি করে ফেলেছে অনেক আগেই। ২০০৩ সালে তাঁরা গ্রামীন এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম (S.H.S.) প্রোগ্রাম শুরু করে। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রায় ৩ মিলিয়ন  S.H.S.  স্থাপন করা হয়ে গেছে, যার আশীর্বাদে প্রায় সারা বাংলাদেশের ৯% মানুষ বিদ্যুতের এই সুবিধা ভোগ করছে। হাজার হাজার প্রকৌশলী এবং কর্মী নিয়োগ হয়েছে এই খাতে। এই প্রকল্প প্রতিবছর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন উল্লেখযোগ্য পরিমান কমাতে এবং কার্বন রাজস্ব আয় করতে সক্ষম। তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য ২০১৭ সালের মধ্যে আরো ৬ মিলিয়ন S.H.S. স্থাপনে অর্থায়ন করা। IDCOL বায়ো গ্যাস প্রকল্পেও অর্থায়ন করেছে।529

বাংলাদেশে পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু এগুলোকে কার্যকরীভাবে ব্যাবহার করা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ শক্তি প্রতিষ্ঠা করে, তাদের উদ্দেশ্য গ্রামের যে সকল অঞ্চলগুলোতে ভবিষ্যতে গ্রিড স্থাপনের সম্ভাবনা খুব কম সেইসব অঞ্চলে সৌরশক্তি পৌঁছে দেওয়া, গ্রামীণ পরিবার গুলোতে স্বল্পমূল্যে পরিবেশবান্ধব শক্তি পৌঁছে দেওয়া। গ্রামীণ শক্তির রয়েছে S.H.S., উন্নত পরিবেশবান্ধব চুলা এবং বায়ো গ্যাস প্রকল্প। এসব প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং যথেষ্ট পরিমান কার্বন রাজস্ব আয়ে সক্ষম।

মাথাপিছু কার্বন নির্গমন জরিপে বাংলাদেশ কম দূষণকারী দেশ, যদিও শুধুমাত্র ইটের ভাটা থেকে প্রতি বছর ৮মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ইটের ভাটা অপিরকল্পিত ভাবে তৈরি। এর প্রেক্ষিতে IIDFCL নামের একটি ব্যক্তিগত আর্থিক প্রতিষ্ঠান একটি C.D.M. প্রকল্প হাতে নেয় এবং এর আওতায়  ১৮টি পরিবেশবান্ধব ইটের ভাটা তৈরি করে ৫০ শতাংশ শক্তি সাশ্রয় করবে এবং ৫০ শতাংশ দূষণ কমাবে। এই প্রকল্প প্রতি বছর ৯০,০০০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড কম নির্গমন করবে এবং যথেষ্ট পরিমান কার্বন ক্রেডিট করবে। শুরুর দিকে এই প্রতিষ্ঠানটি কয়েকটি ইটের ভাটা তৈরি করে, পরে সরকার এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংক ইটের ভাটা খাতকে উন্নত করার জন্য এগিয়ে আসে। IIDFCL এখন বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা যেমন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর সাথে বিভিন্ন শিল্প খাতে শক্তির দক্ষতা উন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

তাছাড়া, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প উন্নতকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২ মিলিয়ন এর একটি তহবিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এর অর্ধেকের বেশি পরিমান অর্থ অলস পরে আছে। এমতাবস্থায়, ব্যাংক এর এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে উদ্যোক্তারা খুব সহজেই এই অর্থ পেতে পারে। ব্যাংক গুলোকে সবুজ অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে হবে।

তবে আশার কথা হল এই যে, বিশ্ব ব্যাংক সবুজ অর্থনীতির প্রবর্তনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আমাদের আশা, এই ধারাবাহিকতায় আমরা সবুজ অর্থনীতির হাত ধরে দীর্ঘমেয়াদীভাবে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হতে পারব।

 

লেখক;

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা কলেজ।      

Check Also

মস্তিস্ক ভক্ষক অ্যামিবা !

এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে অনেক ঔষধ  Naegleria fowleri  (নেগেইলারিয়া ফাউলিরি) এর বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে, তাদের কার্যকারিতা অস্পষ্ট; কারণ প্রায় সব সংক্রমণই মরণঘাতি।

অসাধু ব্যবসায়ীক চক্রেই ভেজাল ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা সাধারণ

পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট এর ফল পরীক্ষার তথ্যানুযায়ীই বলতে হয় যে, এ দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল এবং দেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই চিহ্নিত হয়েছে। সারা দেশ থেকেই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্য দ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *